পিটিয়ে মারা হয়েছে জঙ্গলমহলের বাঘকে। এমন ইঙ্গিত মিলেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও। সম্প্রতি ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছেন বনকর্তারা। রিপোর্ট নিয়ে বনকর্তারা সরাসরি কিছু না বললেও ময়নাতদন্তকারী দলের এক পশু চিকিত্সক মানছেন, “বাঘের দেহে কয়েকটি ক্ষত দেখা গিয়েছে। ওকে যে পেটানো হয়েছে তা স্পষ্ট।” জেলার এক বনকর্তার কথায়, “এটা প্রাথমিক রিপোর্ট। ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলে সব স্পষ্ট হবে।”
গত ১৩ এপ্রিল চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে খুন হয় রয়্যাল বেঙ্গল। সেই রাতেই শালবনির আরাবাড়িতে বাঘের দেহের ময়নাতদন্ত হয়। ভিসেরা এবং ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এক সূত্র জানাচ্ছে, বাঘের দেহের ময়নাতদন্তের জন্য একটি দল গঠন হয়েছিল। দলে পাঁচজন পশু চিকিত্সক ছিলেন। দিন কয়েক আগেই প্রাথমিক রিপোর্ট আসে। রিপোর্টে কী বলা হয়েছে? ওই সূত্র জানাচ্ছে, এতে ময়নাতদন্তকারী দল শুধু তাদের পর্যবেক্ষণের কথাই জানায়। আর প্রাথমিক ভাবে মৃত্যুর কারণের উল্লেখ করে। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আঘাতের কারণে মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে। এক বনকর্তা মানছেন, “বাঘের মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। গায়েও আঘাতের চিহ্ন ছিল।” বাঘের ওপর কি অত্যাচার হয়েছে? এ বার ওই বনকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
বাঘ খুনের তদন্তে ইতিমধ্যে ময়নাতদন্ত হয়েছে একটি শুয়োরেরও। বাঘ খুনের আগে বাগঘোরার জঙ্গলে একটি আধ খাওয়া শুয়োর মিলেছিল। সেটি ওই বাঘ খেয়েছিল বলে অনুমান।
তাই শুয়োরের বিষক্রিয়া ছিল কি না জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বাঘ খুনে বিভাগীয় তদন্তও শুরু করেছে বন দফতর। জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ পর্ষদের (ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি) কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট গিয়েছে। এক পশু চিকিত্সকের অনুমান, মাথায় জোরালো আঘাত পাওয়ায় সম্ভবত কোমায় চলে গিয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল। তাই সে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাগঘোরার জঙ্গলের মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যুর পর থেকেই জল্পনা চলছিল বাঘটিকে প্রথমে বিষ দিয়ে নিস্তেজ করা হয়। তারপর কাঠ বা বাঁশের আঘাতে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলা হয় তাকে। তবে নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ দায়ের হয়নি। অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিষ দিয়েই কি বাঘকে অচেতন করা হয়? এক বনকর্তা বলেন, “সেই সম্ভাবনা খুবই কম। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসার পরই এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব হবে।”