উল্টে আছে ট্রেকার। নিজস্ব চিত্র
চড়তে পারেন বড়জোর ১৩ জন। কিন্তু ঠেসেঠুসে চেপে বসলেন প্রায় ৩৫ জন! ট্রেকারের ভিতরে যাঁদের জায়গা হল না তাঁদের ঠাঁই হল বাম্পারে। এমন ঘটনা নজির বিহীন নয়।
শনিবার এমনই দুই ট্রেকারে দুর্ঘটনায় দুই জেলায় মৃত্যু হল দু’জনের। পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুর থানা এলাকার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রঞ্জিত সিংহ (২৩)। অন্যদিকে ঝাড়গ্রাম জেলার জামব নি এলাকায় মৃত্যু হয়েছে জয়ন্তী দণ্ডপাটের (৩৫)।
বিভিন্ন রুটে অটো, বাস, ট্রেকারে অতিরিক্ত যাত্রী তোলাটাই যেন নিয়ম। ফলে দুর্ঘটনাও নিত্যসঙ্গী। তাতেও হুঁশ ফেরে না। এ দিন ভোরে দাসপুর থানার কাঁকদাড়ি সংলগ্ন কৃষ্ণনগর গ্রাম এক বরযাত্রী বোঝাই ট্রেকার উল্টে মৃত্যু হয় রঞ্জিত সিংহের। ওই ঘটনায় জখম ২ শিশু-সহ আরও পাঁচজন। তাঁদের প্রথমে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রঞ্জিতের বাড়ি ডেবরা থানার চকবলরামপুরে। ট্রেকারটিতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকার কারণেই এই দুঘর্টনা বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাড়িটিকে আটক করা হলেও চালকের পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার সারা রাত বৃষ্টির পরে বিয়ে সেরে ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ কৃষ্ণনগর থেকে কুইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রেকারটি। কৃষ্ণনগর গ্রাম ছাড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে এক জলাশয়ে পড়ে যায় সেটি। ঘটনার পরই জলে নেমে যাত্রীদের উদ্ধার করেন কন্যাপক্ষের লোকেরা। পাত্রীর বাবা রবি সিংহের কথায়, “বৃষ্টির ফলে গ্রামের মাটির রাস্তা খারাপ থাকাতেই এই বিপত্তি।” যদিও প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, এমন খারাপ রাস্তায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক।
এ দিন সকালে চলন্ত ট্রেকার থেকে পড়ে গিয়ে ওই ট্রেকারেরই চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় জয়ন্তী দণ্ডপাটের। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি থানার রেঞ্জ অফিস মোড়ের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃতার বাড়ি জামবনি গ্রামে। এ দিন সকালে জামবনি থেকে বেনাগেড়িয়ার দিকে যাচ্ছিলেন ধান রোয়ার কাজ করতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ট্রেকারটিতে প্রায় ৩০ জন যাত্রী ছিল। ঠাসাঠাসি ভিড়ে জয়ন্তীদেবী বসার জায়গা না পেয়ে একপাশে রড ধরে ঝুলছিলেন। তাঁর অন্য হাতে ছিল পলিথিনের বর্ষাতি। ট্রেকারটি দ্রুত গতিতে চলার ফলে হঠাৎ হাওয়ায় হাতফসকে বর্ষাতিটি উড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ ট্রেকার থামাতে বলেন জয়ন্তীদেবী। গতি কমতেই চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। ট্রেকারের পিছনের চাকায় তাঁর মাথা পিষে যায়। ওই ট্রেকারেই তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে আনা হয়। পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন সড়কগুলিতে নজর রাখলেই দেখা যাবে একই বেনিয়মের দৃশ্য। একটি ট্রেকারে চালক-সহ ১৩ জনের বেশি যাত্রী তোলা নিষিদ্ধ। সেই নিয়ম ভাঙলে পরিবহণ আইন অনুযায়ী মামলা করারও নিদান রয়েছে। তা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রবণতা।
সূত্রের খবর, মাঝে মধ্যে পরিবহণ দফতর অভিযানে নামলে দু’চারদিন বন্ধ থাকে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত বলেন, “আমরা বিভিন্ন রুটেই মাঝে মধ্যে অভিযান চালাচ্ছি। মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রবণতা ঠেকানো যায়নি।” ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহণ কর্মাধ্যক্ষ শুভ্রা মাহাতো বলেন, “নিয়ম ভেঙে ট্রেকারে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।”