হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এক দিকে, এলাকায় বেড়েছে দলমার দাঁতালদের অবস্থান-কাল। বেড়েছে দলে থাকা হাতির সংখ্যাও। অন্য দিকে, সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ‘রেসিডেন্সিয়াল’ হাতিরও। এই জোড়া ফলাতেই বিদ্ধ স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে বন দফতরও। একাংশ বনকর্তার পর্যবেক্ষণ, মেদিনীপুর ডিভিশনের অধীন জঙ্গলমহলে বছরে হাতির অবস্থান-কাল পৌঁছেছে ১০ হাজারের অঙ্কে। কয়েক বছর আগেও সংখ্যাটি ছিল পাঁচ থেকে ছ’হাজারের আশপাশে। এলাকায় রয়েছে পর্যাপ্ত খাবারের জোগান। তার ফলেই এমন পরিস্থিতি— মনে করছেন অনেকেই।
একাংশ বনকর্তার পর্যবেক্ষণ— মেদিনীপুর ডিভিশনে ২০২২-’২৩ সালে, অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত হাতির অবস্থান-কাল ছিল ১০,৩৩৪। ২০২১-’২২’এ তা ছিল ৮,১৯৪। আবার ২০২০-’২১’এ ছিল ৯,১৪০। কিন্তু এই হাতির অবস্থান-কাল বিষয়টি কী? মেদিনীপুরের এক বনকর্তা জানাচ্ছেন, একশো দিনের কাজে যেমন শ্রমদিবসের (ম্যান ডেজ) হিসেব রাখা হয়, তেমনই হাতির অবস্থান-কালেরও (এলিফ্যান্ট ডেজ) হিসেব রাখে বন দফতর। বিষয়টি খানিকটা এই রকম— তিনটি হাতি কোনও এলাকায় দু’দিন ধরে থাকলে, সে ক্ষেত্রে অবস্থান-কাল ধরা হবে ছ’টি।
দফতরের দাবি, এক সময়ে যেখানে দলমা থেকে আসা হাতির দল দক্ষিণবঙ্গে খুব বেশি হলে দু’-তিন মাস থাকত। এখন সেখানে তারা থাকে আট থেকে দশ মাস! অর্থাৎ, বছরের বেশিরভাগ সময়টা তারা এখানে থাকছে। স্বভাবতই বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতি। মেদিনীপুর ডিভিশনে ২০১৮-’১৯ থেকে ২০২২-’২৩, এই পাঁচ বছরে হাতির হানায় ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বছরের হিসেবে যথাক্রমে ১১, ১৪, ৬, ২ এবং ৫ জনের। জেলার এক বনকর্তা বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে স্থায়ী ভাবে হাতি ছিল না। এটা ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়। দলমা থেকে হাতি আসছে। হাতির রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। তাই লোকালয়ে চলে আসছে।’’ জানা যাচ্ছে, কোনও পরিণত হাতির রোজ অন্তত ৩০০ কেজি খাবার চাই। আর জল চাই ১৬০ লিটার।
জেলার ওই বনকর্তার মতে, ১৯৮৭ সালে প্রথম বিহারের দলমা থেকে প্রায় ৫০টি হাতির দল ঝাড়গ্রামে আসে। কিন্তু তখন এদের গতিবিধি কংসাবতীর ওপার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে তারা কংসাবতী পার হয়ে মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গোয়ালতোড়, গড়বেতা, বিষ্ণুপুর হয়ে দ্বারকেশ্বর নদী পার হয়ে বাঁকুড়ার সোনামুখী, পাত্রসায়রে চলে যেতে শুরু করে। বছর খানেক আগে দামোদর পার হয়ে বর্ধমানেও ঢুকে পড়ে। এখন দলমার যে দল এখানে আসে তাতে ১৪০-১৫০টি হাতি থাকে। এই সময়ের মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। সংখ্যাটা প্রায় ৫০।
কিন্তু কেন জেলার জঙ্গলমহলে হাতি বেশিদিন থাকছে? এই প্রসঙ্গে কয়েকটি উত্তর খুঁজেছেন বনকর্তারা। এক, জঙ্গল তথা হাতির বাস করার মতো পছন্দসই পরিবেশের সার্বিক উন্নতি। দুই, অফুরন্ত খাদ্যের জোগান, জঙ্গল ও পার্শ্ববর্তী চাষাবাদের অঞ্চল থেকে জলের পর্যাপ্ত জোগান। তিন, জঙ্গলের পাশ্ববর্তী এলাকার লোকালয়ের বাড়িতে খাদ্যের মজুত ভাণ্ডার। চার, হাতির দল তাড়ানোর সময় হাতিদের উপর কঠোর ও নিষ্ঠুর আচরণ না করা। পাঁচ, জঙ্গল নিকটবর্তী লোকালয়ে অসংখ্য দেশি মদের ভাটি যা খুব সহজে বুনো হাতির দলকে আকৃষ্ট করছে। এই সমস্যার সমাধানে এক সময়ে ময়ূরঝর্না প্রকল্পের পরিকল্পনা হয়েছিল।
জেলার এক বনকর্তা মানছেন, ‘‘হাতির করিডর তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।’’