মন খারাপের ঠিকানায় চিঠি

মনের কথা লিখে সেখানে জমা করছে পড়ুয়ারা। আর তাদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন ‘মনের বন্ধু’রা। সমস্যামুক্তির পথ বাতলে দেওয়া হচ্ছে অভিভাবকদেরও।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৫০
Share:

বাক্স: স্কুলে ঘরে। নিজস্ব চিত্র

প্রধান শিক্ষিকার ঘরে রাখা একটি সাদা বাক্স। মনের কথা লিখে সেখানে জমা করছে পড়ুয়ারা। আর তাদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন ‘মনের বন্ধু’রা। সমস্যামুক্তির পথ বাতলে দেওয়া হচ্ছে অভিভাবকদেরও।

Advertisement

প্রতি দিনের কাজের চাপে ব্যস্ত বাবা-মা। ফলে সন্তানের পিছনে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না তাঁরা। পরিবারের মধ্যে তৈরি হচ্ছে দূরত্ব। এর ফলে মানসিক অবসাদে ভুগছেন অনেক পড়ুয়াই। নিজের কথা বলার মতোও কেউ নেই ছোট পরিবারে। সেই সমস্যায় তাই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে ঝাড়গ্রামের রানি বিনোদ মঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়।

পড়ুয়ারা তাদের জীবনের নানা সঙ্কটের কথা অনেক সময়েই ভাগ করে নেন প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে। সেই সব অভিযোগ শুনতে শুনতেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পুষ্পলতা মুখোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য শিক্ষিকারা। মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে স্কুল। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সাড়ে সাতশো পড়ুয়ার অভিভাবক ও শ্রেণি শিক্ষিকাদের কাছে প্রশ্নমালা পাঠিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেখানে সন্তানের স্বভাবের কথা জানতে চাওয়া হয়। সে জেদি, অবাধ্য, খিটখিটে কি না, জানতে চাওয়া হয় এ সবই। অভিভাবক ও শিক্ষিকাদের জবাবের ভিত্তিতে ২৭ জন ছাত্রীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য বেছে নেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এর পরেই তাদের মনের কথা লিখে জানাতে বলা হয়। কেউ জানায়, পড়াশোনার চাপে গান শেখা বন্ধ। তাই হারমোনিয়াম দেখলেই তার কান্না পায়। দুঃখে পড়াশোনায় মন বসে না। কেউ বলে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পরে সে বাবার কাছে থাকে। ‘মিস’ করে তার মা-কে। কেউ আবার বলে, শিক্ষিকা ও সহপাঠীরাই তার প্রিয় বন্ধু। এক জন জানায়, দাদু-ঠাকুমাকে থেকে তাকে জোর করে নিয়ে আসায় বাবা-মাকে মোটেই ভালবাসে না সে। কারও আবার টিউশনের চোটে স্কুলে যাওয়াই দায়! পড়াশোনা নিয়ে যেমন মনের কথা জমা পড়েছে, তেমনই এক জন জানিয়েছে যে সহপাঠিনীর মতো সুন্দরী না হওয়ায় সঙ্কোচে থাকে সে। তাই কখনও হয়তো একা-একাই কথা বলে সে। কাউকে হয়তো পরিবারের লোকেরা ভাই বা বোনের চেয়ে কম ভালবাসে। তবে এই ২৭ জন ছাড়াও আরও দু’জন রয়েছে যারা মনের ভাব প্রকাশ করার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। প্রতি মাসেই চলবে এই সহায়তার ব্যবস্থা।

দিন কয়েক আগে স্কুলের সভাঘরে পড়ুয়াদের মনের কথা শোনেন মনোবিদ তনোদীপ দাস ও ‘মনের বন্ধু’ (কাউন্সিলর) দীপঙ্কর পাল। তার পর ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন দীপঙ্করবাবুরা। সন্তানকে সময় দেওয়া, তাদের অহেতুক সমালোচনা বা তুলনা না করে উত্সাহ দেওয়া, সন্তানের সামনে ঝগড়া না করা, একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করার মতো কিছু বিষয়ের উপর জোর দিতে বলেন তাঁরা।

স্কুলের শিক্ষিকাদের জন্যও ‘মনের বন্ধু’দের সঙ্গে গল্পগুজবের আসরের ব্যবস্থা হবে এর পরে। পুষ্পলতা দেবী বলেন, “আমাদের আচরণেও তো ত্রুটি থাকতে পারে।” দীপঙ্করবাবুর কথায়, “আমরা বড়রাই ছোটদের সমস্যাগুলো তৈরি করি। সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক হয়ে উঠতে পারাটা খুব জরুরি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement