বাপির মা-কে ভরসা। নিজস্ব চিত্র
করোনা আবহের মধ্যেই ক্যানসার ধরে পড়েছে এক হিন্দু যুবকের। তাঁর পাশে দাঁড়ালেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন। দেশজুড়ে বেড়ে চলা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার মধ্যেই মহরমের দিন ইতিবাচক এই ঘটনার সাক্ষী রইল খড়্গপুর শহর। পুরাতনবাজার সংলগ্ন সাঁজোয়াল সমাজ সঙ্ঘের তরফে বাপি দাস নামে ওই টোটো চালকের পাশে দাঁড়ান মহম্মদ বিলাল, আমজাদ খানরা।
দাঁতের সমস্যায় ভুগতে থাকা বাপির ক্যানসার ধরা পড়ে এপ্রিলে। কটকের হাসপাতালের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। বছর বত্রিশের বাপি আপাতত বাড়িতেই আছেন। তিনিই সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। ফলে, চিকিৎসার বিপুল খরচের ধাক্কায় অসহায় দশা পরিবারের। তা জেনেই সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেন সমাজ সঙ্ঘের উপদেষ্টা মহম্মদ বিলাল।
করোনা কালে মহরমের মিছিল করা যাবে না বলে আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। তাই মিছিলের বদলে বাপির জন্য অর্থ সংগ্রহে নামে ওই ক্লাব। শনিবার মহরমের দিনে অর্থ সাহায্য করা হয় বাপির পরিবারকে। বাপির মা পুষ্পদেবী বলেন, ‘‘আমাদের এখন দিশাহারা অবস্থা। এলাকার মুসলিম ভাইদের পাশে পাওয়াটা অনেক বড় প্রাপ্তি।” বিলাল জানান, আপাতত ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশও ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, অনেককে বললেও এখনও সে ভাবে সাহায্য মেলেনি।
এটাই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের মহরমেও মিছিল বাতিল করে আবির ভুঁইয়া নামে আরেক ক্যানসার আক্রান্তকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়েছিলেন বিলালরা। সে লড়াই অবশ্য সফল হয়নি। ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল আবিরের। এ বারের লড়াই জিততে আরও বেশি করে বদ্ধপরিকর তাঁরা। তাই খড়্গপুর টাউন থানায় মহরম সংক্রান্ত প্রথম বৈঠকেই বাপির জন্য অর্থ সাহায্যের দাবি জানানো হয়। তাতে সাড়াও মেলে। শুক্রবার থানায় দ্বিতীয় বৈঠকে শহরের ১৩টি মুসলিম সংগঠনের হাতে ৫ হাজার টাকা ও বিলালের হাতে বাপির চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা তুলে দেয় পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলছেন, “এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই তো দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত।”