jangal mahal

জঙ্গলমহলে দ্রুত প্রসারিত বুদ্ধ-মমতার চপশিল্প

জঙ্গলমহল সফরে এসে বিনপুরের মাগুর গ্রামে রাজ্য সড়কের ধারে বুদ্ধদেব মহন্তর চপের দোকানে থেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

রঞ্জন পাল

বিনপুর শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫৪
Share:

বুদ্ধদেবের দোকান। নিজস্ব চিত্র

এ যেন ঠাকুমার ঝুলির সেই অরূপরতন পাওয়ার গল্প! মুখ্যমন্ত্রীর জাদুকাঠির (পড়ুন হাত) ছোঁয়ায় এখন মহার্ঘ বুদ্ধদেবের চপের হাতা! যে হাতায় লেগে রয়েছে মমতা-স্পর্শ, যে হাতায় হয়েছে লক্ষ্মীলাভ তা যত্নে স্মারক হিসেবে তুলে রাখতে চান বু্দ্ধদেব। যৌথ উদ্যোগে চপশিল্পের সে দিন তাঁর কাছে যেন জেগে দেখা এক স্বপ্ন।

Advertisement

জঙ্গলমহল সফরে এসে বিনপুরের মাগুর গ্রামে রাজ্য সড়কের ধারে বুদ্ধদেব মহন্তর চপের দোকানে থেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের হাতে চপ ভেজে সেগুলি কিনে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর পদস্পর্শে বুদ্ধদেবের দুঃখমোচন কতটা হয়েছে সেটা অবশ্য তর্কের বিষয়। তবে রাতারাতি যেন তারকা হয়ে গিয়েছেন ছা-পোষা চপওয়ালা। বেলপাহাড়ি সফর সেরে বিকেলে খোঁজেন কোথায় বুদ্ধদেবের চপের দোকান। পর্যটকরা বুদ্ধদেবের দোকানের ছবি তোলেন। বুদ্ধদেবের সঙ্গে নিজস্বী তোলেন। এটাও তো বড় প্রাপ্তি।

শীতের সূর্য যত অস্তাচলে যাচ্ছে, তত ঘনাচ্ছে আঁধার। ঠিক তখনই ঘন হচ্ছে বুদ্ধদেবের চপ দোকানের ভিড়। গত ১৫ নভেম্বর বেলপাহাড়ির সাহাড়ির সভা সেরে ঝাড়গ্রাম ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মাগুরায় রাস্তার ধারে বুদ্ধদেবের চপ দোকানে কাটিয়েছিলেন দীর্ঘক্ষণ সময়। গাড়ি থেকেই মুখ্যমন্ত্রী চা পাওয়া কি না জিজ্ঞাসা করেছিলেন বুদ্ধদেবকে। বুদ্ধদেব হ্যাঁ বলায় ২৫ কাপ চা বানাতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মত বুদ্ধদেবের বাবা দিলীপ মহন্ত চা বানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চা খাওয়া হয়নি। ততক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে চপের ছান্তা ধরে ভেজে প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিক সহ সকলকে চপ বিলিয়ে ছিলেন। তার বিনিময়ে জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল দেড় হাজার টাকা বুদ্ধদেবকে দিয়েছিলেন। তার পর কেটে গিয়েছে তিন সপ্তাহ। কিন্তু সেই দৃশ্য যেমন বুদ্ধদেবের চোখে ভাসছে। বুদ্ধদেব চপ ভাজতে ভাজতে বললেন, ‘‘সেই রাতে ঘুমোতে পারিনি। এখনও ঘুমনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর কথা মনে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর হাতের ছোঁয়ার সেই চপ ভাজার হাতায় এখন চপ ও পেঁয়াজি ভাজেন। বুদ্ধদেব বলছেন, ‘‘এই হাতাটি খুবই পলকা। বিনপুর হাটে নতুন হাতা কেনার পর মুখ্যমন্ত্রীর ছোঁয়া লেগে থাকা এই হাতাটি সযত্নে তুলে রাখব।’’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বারে বারেই তেলেভাজা বিক্রির কথা বলেন। তবে আক্ষরিক অর্থেই বুদ্ধদেবের চপ শিল্পে লক্ষ্মীলাভ ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতের ছোঁয়ায়। বুদ্ধদেব জানাচ্ছেন, ‘‘আগে সারাদিনে আড়াইশো চপ বিক্রি হত। এখন চারশো থেকে সাড়ে চারশো চপ দৈনিক বিক্রি হচ্ছে।’’ গত ছ’বছর ধরে বাবার শুরু করা এই ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন বুদ্ধদেবও। পঞ্চম শ্রেণি পর পড়াশোনার ছেদ পড়ে তাঁর। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। তারপর বাবার দোকানে যোগদান। এখন বাবার দোকান নিজে সামলান। বুদ্ধদেব বলছেন, ‘‘এই দোকানের গায়ে পাকা বাড়ি বানিয়েছি। দোকানটা গোছানোর ইচ্ছে আছে। এখন মনে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কেন বলতে পারলাম না। এটা আফসোস হচ্ছে।

আফসোস হলেও মুখ্যমন্ত্রীর পদস্পর্শে যে লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন বুদ্ধদেব।’’ বুদ্ধদেব বলছেন, ‘‘আগে কোনওদিন পর্যটকরা এখানে দাঁড়াতেন না। এখন বেলপাহাড়ি থেকে পর্যটকরা ঝাড়গ্রাম ফেরার পথে অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। অনেকে চপ খান। আবার কেউ কেউ নিজস্বী তোলেন।’’

বুদ্ধদেবের দোকানে পেঁয়াজি ও চা খেতে খেতে মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা পার্থসখা পাত্র বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসার পর বুদ্ধর দোকানে অনেকে মানুষজন আসেন। পর্যটকরাও প্রচুর আসছেন।’’ শীতে সন্ধ্যার আড্ডায় চাই গরম চা আর চপ। মমতা-বুদ্ধ যৌথ উদ্যোগের চপশিল্পের তাই বিস্তারঘটছে দ্রুত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement