আইআইটি-র নির্মীয়মাণ ভবনে কাজ চলাকালীন শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় নির্মাণকারী সংস্থার তিন কর্তাকে পুলিশ বুধবারই আটক করেছিল। বৃহস্পতিবার গুজরাতের ওই নির্মাণ সংস্থার নিরাপত্তা আধিকারিক প্রবীর বিশ্বাস ও প্রকল্প প্রধান আদিত্য সিংহকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ দিনও ঘটনায় যুক্ত দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আইআইটি চত্বরে মৌনী মিছিল করেন শ্রমিকেরা। আইআইটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগে সরব হয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি।
সুরক্ষা বিধি না মেনেই শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও ত্রুটি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমরা নির্মাণ সংস্থার দু’জন আধিকারিককে গ্রেফতার করেছি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কোথায় ত্রুটি ছিল তা জানতে তদন্ত চলছে।” ধৃতদের মধ্যে প্রবীর বিশ্বাসের বাড়ি নদিয়ায়। আর আদিত্য সিংহ বিহারের বেটিয়ার বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতদের এ দিন মেদিনীপুরে জেলা আদালতে তোলা হবে সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।
গত বুধবার সকালে আইআইটি-র নির্মীয়মাণ ডায়মন্ড জুবিলি কমপ্লেক্সের আটতলায় লিফ্ট বসানোর জায়গায় প্লাস্টার করার কাজ করছিলেন চারজন শ্রমিক। আচমকা লোহার মাচা ভেঙে যাওয়ায় চারজন শ্রমিক আটতলা থেকে সোজা নীচে গিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন আরও এক শ্রমিক। ওই শ্রমিকেরা মাথায় হেলমেট পরলেও তাঁদের কোমরে কোনও সেফটি বেল্ট বাঁধা ছিল না। মাচার নীচে লাগানো ছিল না কোনও লোহার জালও। ফলে তিন শ্রমিকের মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর বক্তব্য, কেন্দ্রের অধীনস্থ একটি সংস্থার পরিচালনায় আইআইটি-র যাবতীয় নির্মাণ কাজ করা হয়। তবে প্রধান নিয়োগকারী সংস্থা হিসাবে নজরদারি চালান আইআইটির কর্তৃপক্ষই। অথচ বুধবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে হয়তো ওই বিপদ এড়ানো যেত। কিন্তু সংস্থার গাফিলতিতেই শ্রমিকদের মৃত্যু হল বলে অভিযোগ। প্রধান নিয়োগকারী সংস্থা হিসাবে আইআইটি এর দায় অস্বীকার করতে পারে না। বুধবার দুর্ঘটনার পরেই নির্মাণকারী সংস্থার কর্তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবারও আইআইটি-র স্টিল ময়দানের মোড় থেকে মৌনী মিছিল করেন শ্রমিকেরা। আইআইটি চত্বরে ঘুরে স্টিল ময়দানের মোড়ে এসে মিছিল শেষ হয়। নেতৃত্বে ছিলেন এআইটিইউসি-র সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট, আইএনটিটিইউসি-র নেতা দেবাশিস চৌধুরী, সিটু নেতা মনোজ ধর। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, “আইআইটি একটি নির্মাণ সংস্থাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিল। নিরাপত্তার গাফিলতিতে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় আইআইটি কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।” বিপ্লববাবুরও অভিযোগ, “এই ঘটনায় আইআইটি ও নির্মাণ সংস্থা দু’পক্ষই দোষী। আইআইটি কর্তৃপক্ষ দায় অস্বীকার করতে পারবেন না। আমরা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাইছি।”
এ বিষয়ে আইআইটি-র নিবন্ধক প্রদীপ পাইন বলেন, “আইআইটিতে সমস্ত নির্মাণ কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একটি সংস্থার মাধ্যমে হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। আমরা আপাতত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। পুলিশ সব বিষয় খতিয়ে দেখছে।”