প্রতীকী ছবি।
মাথায় হেলমেট থাকলেও তাঁদের কোমরে ছিল না ‘সেফ্টি বেল্ট’। যে লোহার মাচায় বসে তাঁরা আটতলার লিফ্ট বসানোর জায়গায় দেওয়াল প্লাস্টার করছিলেন, তার নীচে ছিল না কোনও লোহার জাল। আচমকা সেই মাচা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় প্রাণ গেল তিন শ্রমিকের। গুরুতর জখম হন এক জন।
বুধবার সকালে খড়্গপুর আইআইটি-র নির্মীয়মাণ ‘ডায়মন্ড জুবিলি কমপ্লেক্স’-এ এই দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই শ্রমিকদের সুরক্ষা বিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। নিরাপত্তার দিক যথাযথ দেখভাল না-করার অভিযোগে এ দিন ভিন্ রাজ্যের ওই নির্মাণকারী
সংস্থার এক কর্তাকে ঘেরাও করেন শ্রমিকেরা। দুর্ঘটনায় মৃত তিন শ্রমিক প্রভাকর মিশ্রম (২৬), চিত্ত ঘোষ (৩৬) ও অমিতোষ হালদার (৪৪) খড়্গপুরের বাসিন্দা। খড়্গপুর টাউন থানায় মৃতদের পরিবারের দায়ের করার অভিযোগের ভিত্তিতে নির্মাণকারী সংস্থার নিরাপত্তা অফিসার-সহ তিন জনকে আটক করে পুলিশ।
খড়্গপুর আইআইটি-র নিবন্ধক প্রদীপ পাইন বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নির্মাণ সংস্থার আটক হওয়া তিন জন পুলিশকে জানিয়েছেন, তদন্তে সব রকম সাহায্য করবেন। তবে, নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি ছিল বলে তাঁরা মানতে চাননি। খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল জানান, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, কোনও উঁচু জায়গায় শ্রমিকদের কাজ করানোর জন্য ওই তিনটি সুরক্ষা বিধির মধ্যে মাত্র একটি মানা হয়েছিল খড়্গপুর আইআইটি-তে। তা-ও শ্রমিকদের মাথার হেলমেট ছিল নিম্ন মানের। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘মাচার লোহার রড শক্ত ভাবে বাঁধা রয়েছে কিনা, তা না দেখেই সম্ভবত ওই চার জন শ্রমিক কাজ করতে বসে পড়েন। না হলে মাচা ভেঙে পড়ার কথা নয়।’’ ওই কমপ্লেক্সেই এ দিন কাজ করছিলেন শুভম শঙ্কর, পি রাজেশ নামে আরও দুই শ্রমিক। তাঁদের কথায়, “চোখের সামনেই আচমকা মাচাটা ভেঙে পড়ে। নীচে জাল লাগানো থাকলে হয়তো এই বিপদ হতো না।”
দুর্ঘটনার পরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা প্রভাকর, চিত্ত এবং অমিতোষকে মৃত ঘোষণা করেন। জয়ন্ত মিদ্যা নামে জখম অন্য শ্রমিককে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।