চূড়ায় আগাছা, অযত্নে দু’শো পেরনো রাসমঞ্চ

যেন ধ্বংসের অপেক্ষায় দিন গুনছে শিলদার ঐতিহ্যবাহী প্রত্ন-কীর্তি রাসমঞ্চ!

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শিলদা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৯
Share:

ভগ্নপ্রায়: রাসমঞ্চের বর্তমান অবস্থা এমনই। —নিজস্ব চিত্র।

যেন ধ্বংসের অপেক্ষায় দিন গুনছে শিলদার ঐতিহ্যবাহী প্রত্ন-কীর্তি রাসমঞ্চ!

Advertisement

চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী শিলদার রানি কিশোরমণির আমলের রাসমঞ্চটি দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা এলাকার নাদপাড়ায় সরু রাস্তার ধারে রয়েছে অতীত ইতিহাসের সাক্ষী এই সৌধটি। ল্যাটেরাইট বা ঝামা পাথরের তৈরি ‘নবরত্ন’ রাসমঞ্চটির করুণ দশা। ৯টি চূড়া বট, অশ্বত্থ আর আগাছায় ভরেছে। গোলাকার রাসমঞ্চটির প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে সূক্ষ্ম নকশা রয়েছে। আগাছা ও আবর্জনায় ভরে থাকায় এখন ভেতরেও ঢোকা যায় না।

প্রত্ন-গবেষকদের মতে ‘বেহারি রসুন চূড়া’ শৈলির এমন রাসমঞ্চ খুবই কম দেখা যায়। কিশোরমণির স্মৃতি বিজড়িত এই সৌধ সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন জেলার প্রত্ন গবেষকরা। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রশাসনিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। শিলদার নতুন প্রজন্মের অনেক বাসিন্দাই এই রাসমঞ্চের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না।

Advertisement

মেদিনীপুরের বর্ষীয়ান প্রত্ন-গবেষক চিন্ময় দাশের বিভিন্ন প্রবন্ধে এই রাসমঞ্চের ইতিহাসের কথা জানা যায়। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী চুয়াড় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছিল মেদিনীপুরে। ওই সময় শিলদা অঞ্চলে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় রাজা মানগোবিন্দ রায় ও তাঁর পাটরানি কিশোরমণি। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে মানগোবিন্দের মৃত্যুর পরে শিলদা পরগনার অধীশ্বরী হন রানি কিশোরমণি। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কিশোরমণি শিলদায় রাজত্ব করেন। জনশ্রুতি, কিশোরমণির আমলে প্রাসাদের মূল ফটকের বাইরে রাসমঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। প্রাসাদের ভিতরে ছিল কিশোর-কিশোরী মন্দির ও পার্শ্বদেবতার মন্দির। রাস উৎসবের সময় মন্দিরের বিগ্রহদের নিয়ে আসা হত রাস্তার ধারের রাসমঞ্চে। রাজমন্দিরের দেবতাদের বছরে একবার ওই সময় সেবা করার সুযোগ পেতেন সর্বসাধারণ। জানা যায়, শিলদার রাজ পরিবার শিবের উপাসক ছিলেন। পরে বৈষ্ণবমত প্রচারক শ্যামানন্দ গোস্বামী ও রসিকানন্দ গোস্বামীর প্রভাবে শিলদায় বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটিয়েছিলেন কিশোরমণি। তাই প্রাসাদ চত্বরে রাধা-কৃষ্ণের মন্দির এবং বাইরে রাসমঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল।

কিশোরমণির মৃত্যুর পরে শিলদায় তাঁর প্রাসাদ চত্বরটি মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানির হাতে চলে যায়। চুরি হয়ে যায় শতাব্দীপ্রাচীন বিগ্রহগুলি। পরে বাম আমলে রাজ্য সরকার প্রাসাদ চত্বরের একাংশ জমিকে খাস ঘোষণা করে। এখন মন্দির ছাড়া প্রাসাদের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে প্রাসাদের প্রধান তোরণ ‘হাতি দুয়ার’টি রয়েছে। বছর তিনেক আগে প্রাসাদ চত্বরের জমিতে তৈরি হয়ে গিয়েছে বেলপাহাড়ি বিএলআরও অফিস। জনশ্রুতি, প্রাসাদের মূল দরজা দিয়ে হাতি ঢুকতে পারত বলে হাতিদুয়ার নাম। দরজাও ধ্বংসের মুখে। পাশে প্রাচীন আমলের খাড়াই সিঁড়ি দিয়ে তোরণটির মাথায় নহবতখানায় ওঠা যায়।

স্থানীয় প্রবীণ শিল্পী ভগীরথ ঘর, স্কুলশিক্ষক হর্ষ মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘রাসমঞ্চ, হাতি দুয়ার ও মন্দির দু’টির সংস্কার করা হলে পর্যটকদের কাছে এলাকাটি আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠতে পারে।’’ বেলপাহাড়ির বিডিও বরেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই প্রত্ন-কীর্তি সংরক্ষরণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement