স্ট্রোক ঠেকাতে ওষুধ সতর্কতাই

রবিবার, বিশ্ব স্ট্রোক দিবসে কলকাতায় এক আলোচনাসভায় বক্তারা সেই নীতিবাক্যেরই পুনরাবৃত্তি করলেন। এবং খেদ প্রকাশ করলেন, রক্তচাপের উপরে নিয়মিত নজরদারি চালালে স্ট্রোকের মতো রোগ ঠেকানো যায়, অথচ অধিকাংশ মানুষ এখনও সেই বিষয়ে সচেতন নন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

নীতিকথা বলে, অসুখ হওয়ার পরে নিরাময়ের চেষ্টা করার চেয়ে রোগ যাতে আগেই প্রতিরোধ করা যায়, সেই বিষয়ে সতর্ক হওয়া ভাল।

Advertisement

রবিবার, বিশ্ব স্ট্রোক দিবসে কলকাতায় এক আলোচনাসভায় বক্তারা সেই নীতিবাক্যেরই পুনরাবৃত্তি করলেন। এবং খেদ প্রকাশ করলেন, রক্তচাপের উপরে নিয়মিত নজরদারি চালালে স্ট্রোকের মতো রোগ ঠেকানো যায়, অথচ অধিকাংশ মানুষ এখনও সেই বিষয়ে সচেতন নন। ‘স্ট্রোক ফাউন্ডেশন অব বেঙ্গল’ আয়োজিত ওই আলোচনসভায় স্ট্রোকের মতো অসুখ রুখতে প্রতিরোধের উপরেই গুরুত্ব দেন অধিকাংশ চিকিৎসক।

স্ট্রোক কী? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের যে-কোনও অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়। রক্ত ছাড়া মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক ক্ষেত্রে কোষ মরেও যায়। স্ট্রোকের জেরে ক্ষমতা হ্রাস পায় বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের। চিন্তাশক্তি এবং অনুভূতি প্রকাশেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, ফি-বছর ভারতে ২০ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় অন্তত ছ’লক্ষের। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র কুড়ি শতাংশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। অধিকাংশ রোগীই পঙ্গুত্বের শিকার হন।

Advertisement

অথচ আগে থেকে সচেতন হতে পারলে ছবিটা বদলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁদের মতে, রক্তচাপের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখলে এড়ানো যেতে পারে বিপদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১০ জন স্ট্রোক-আক্রান্তের মধ্যে আট জনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ভারতে শহরের এক-তৃতীয়াংশ এবং গ্রামের এক-চতুর্থাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্তচাপের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয় না। স্ট্রোকের পরে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, রোগী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তখন ঝুঁকি বেড়ে যায়।

শুধু রক্তচাপের অস্বাভাবিক হেরফের নয়, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরনও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত তেলমশলাদার খাবার স্থূলতা, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা ডেকে আনে। এগুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকি বাড়ে মদ, তামাক সেবনের জেরেও। তাই চিকিৎসকেরা বলছেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনেই নিহিত রয়েছে রোগ প্রতিরোধের উপায়। চিকিৎসক দীপেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্ট্রোক নিয়ে অধিকাংশ মানুষের স্বচ্ছ ধারণা নেই। সেটাই বিপদ বাড়াচ্ছে। স্ট্রোক সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত হাঁটা, দিনে তিন গ্রামের বেশি নুন না-খাওয়ার মতো অভ্যাস এই রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খাওয়া এবং তাঁদের পরামর্শ ছা়ড়া ওষুধ বন্ধ না-করা।’’

প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে স্ট্রোক সংক্রান্ত ঝুঁকির মাত্রা জানা যাবে, এ দিন আলোচনা হয় সেই বিষয়েও। ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন’-এর অনুমতি নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি হয়েছে। তার নাম ‘স্ট্রোক রিস্কোমিটার’। সেখানে বয়স, ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ২০টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেই প্রযুক্তি জানিয়ে দেবে, আগামী পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটা। ‘‘প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে শরীর-সচেতন করার প্রয়াস এটা। প্রায় প্রত্যেকেই এখন স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করেন। ‘স্ট্রোক রিস্কোমিটার’ অ্যাপের ব্যবহার খুবই সহজ। ঝুঁকির মাত্রা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ভাবে বিপদ কিছুটা কমতে পারে,’’ বললেন চিকিৎসক এ শোভনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement