ফাইল চিত্র।
লকডাউনের মধ্যে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। সপ্তাহান্তে যে একটু মাছ-মাংস হেঁসেলে চড়বে, তা-ও যেন ক্রমশ দুরূহ হয়ে উঠছে। মুরগি এবং পাঁঠার মাংস কিনতে গিয়ে হাতে ছ্যাঁকা লাগার জোগাড়। সব্জির দাম তা-ও আয়ত্তে রয়েছে। কিন্তু যে ভাবে আমপান (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন) দুই ২৪ পরগনা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলায় তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে কত দিন সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
গত কয়েক দিনে তরতরিয়ে বাড়ছে মাছ-মাংসের দাম। ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবের পর মুরগির মাংসের দাম ক্রমশই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পাঁঠার মাংস ইতিমধ্যেই আকাশ ছুঁয়েছে! বুধবার কলকাতায় মুরগির কাটা মাংসের দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা। গোটা মুরগি নিলে ১৭০ টাকা প্রতি কেজি। লকডাউন ঘোষণার পর মুরগির মাংসের দামে তলানিতে চলে গিয়েছিল। ৫০-৬০ টাকা কাটাতেও মিলছিল মুরগির মাংস। পাঁঠার মাংস ইতিমধ্যেই কেজি প্রতি ৮০০ টাকা ছুঁয়েছে। স্থান বিশেষে ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউনের কারণে ভিন্রাজ্য থেকে পাঁঠার আমদানিতে ভাটা পড়েছে বলেই দাম বাড়ছে, এমনই মত ব্যবসায়ীদের।
অন্য দিকে, আমপানের কারণে দাম বেড়েছে মুরগির। কারণ কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, নদিয়া, মেদিনীপুর, হাওড়াতে যে ভাবে আমপান তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুই ২৪ পরগনার অনেক জায়গাতেই পোল্ট্রি ফার্ম ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মুরগির মৃত্যুও হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি। তিনি বলেন, “প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পোল্ট্রি মালিকেরা। কী ভাবে এর ক্ষতিপূরণ হবে জানি না। মুরগির মাংসের চাহিদা বেশি। কিন্তু যোগান নেই। তাই দাম বাড়ছে।”কলকাতাতে ২৫০ টাকা মুরগির দাম উঠলেও, জেলাতে ২২০ থেকে ২৩০ টাকাতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তা-ও কি এত দাম দিয়ে মাংস কেনা সম্ভব? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা গৌতম সরকার বলেন, “বাড়িতে কয়েক জন লোক এসেছে। কিছু তো কিনতে হবে। মাছ কিনতে গেলাম, রুই মাছ ২৫০ টাকা, কাতলা নেই। কয়েকটা দোকানে আছে, তা ৩০০ ছাড়িয়েছে। মুরগির মাংস কিনব, তা-ও ২৫০ টাকা। কী খাব?”
আরও পড়ুন: উচ্চস্তরীয় বৈঠকে জেনারেল নরবণে, লাদাখে বড় সৈন্য সমাবেশ ভারতের
সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে পাঁঠা বিক্রি। ফাইল চিত্র।
সরশুনার একটি দোকানে পাঁঠার মাংস কিনতে গিয়েছিলেন লাল্টু দাস। ৮০০ টাকা পাঁঠার মাংসের দাম শুনে ফেরে আসতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের আবদার মেটাতে গিয়ে না চাইলেও, ৫০০ গ্রাম কিনতে হল। লাল্টুবাবুর কথায়: “লকডাউনের পর থেকে এক দিনও পাঁঠার দোকানের দিকে যাইনি। ছেলে বায়না করছে। কী করব, ওকে তো বোঝানো যায় না। ৪০০ টাকা খরচ হয়ে গেল।”
আরও পড়ুন: দুর্বিপাকের ২০২০: ব্যাপক বিপর্যয়ের চক্রব্যূহে গোটা দেশ
এ দিন বকুলতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেল একই হাল। কাতলা মাছ নেই। চারা মাছ ২৫০, বাটা মাছ ২৮০, অন্ধ্রপ্রদেশের রুই আছে, কিন্তু তা ২৫০ টাকা। দোকানদারা হাপিত্যেস করে বসে রয়েছেন।