ফাইল চিত্র।
আদালতে হলফনামা পেশ করে রত্না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক জুড়তে চান তিনি। আলিপুর আদালতে সোমবার তার শুনানিতে বিচারকও বলেন, বিষয়টি মিটিয়ে নিলেই ভাল হয়। কিন্তু মেয়র ও মন্ত্রী শোভনবাবু আইনজীবী মারফত এ দিন আদালতে জানিয়ে দেন, তিনি বিবাহবিচ্ছেদই চান। পুরনো সম্পর্কে আর ফিরতে রাজি নন।
শোভনবাবুর প্রত্যাখ্যানে গোটা বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা পেল বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। কয়েক মাস আগে স্ত্রী রত্নাদেবীর বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন মেয়র। স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের মধ্যে টাকা আত্মসাতের বিষয়টিও আছে। মামলা চলাকালীন এক কলেজ-শিক্ষিকার সঙ্গে মেয়রের নাম জড়িয়ে জল রীতিমতো ঘোলা হয়। পরিবার এবং দলের চাপ সত্ত্বেও মেয়র ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন না বলে জানিয়ে দেন। ইতিমধ্যে রত্নাদেবীর বিরুদ্ধে তিনি নিজে এবং ওই কলেজ-শিক্ষিকা বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। মুখ খুলেছেন রত্নাদেবী, তাঁর পরিবারও।
এই পরিস্থিতিতে শোভনবাবুর দায়ের করা বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় এ দিন ‘পুনর্মিলন’ পর্যায়ের শুনানি ছিল আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক শান্তনু মিশ্রের এজলাসে। বেলা ৩টে নাগাদ আদালতে হাজির হন রত্নাদেবী। তাঁর তরফে জানানো হয়, তিনি বিবাদ মিটিয়ে নিতে চান। আর সেখানেই মেয়রের পক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্ত্রীর সঙ্গে কোনও রকম আপস করবেন না তিনি।
আরও পড়ুন: শ্যামাপ্রসাদে কালির পোঁচ প্রেসিডেন্সিতে
রত্নাদেবী এ দিন আদালতে হাজির থাকলেও মেয়র যাননি। তবে দুপুরে এক ঘণ্টার জন্য পুরভবন থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
রত্নাদেবীর আইনজীবী শুভাশিস দাশগুপ্ত আদালতে জানান, শোভনবাবু বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছেন। কিন্তু রত্নাদেবী বিচ্ছেদে আগ্রহী নন। তাই পুনর্মিলন নিয়ে শুনানির আবেদন জানানো হয়েছে।
মেয়রের আইনজীবী প্রতিম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমার মক্কেল পুনর্মিলনে আগ্রহী নন।’’
দু’পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মিটিয়ে নিতে অনুরোধ করেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘বিবাহবিচ্ছেদ মামলা মিটিয়ে নেওয়া মানে দু’জনকে একসঙ্গে ঘর করতে বলা হচ্ছে না। তা না-ও করা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। নানা প্রশ্ন উঠছে। বিতর্ক চলছে। তাই মিটমাট করে নিলেই ভাল হয়।’’
ওই আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, বিচারক দু’পক্ষকে ফের আলোচনা করে বিচ্ছেদে না-যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তী শুনানি ৩ এপ্রিল। শোভনবাবুর আইনজীবী বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের সামাজিক সম্মান রয়েছে। সেই জন্য সে-দিন ‘ইন-ক্যামেরা’ (রুদ্ধদ্বার) শুনানির ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।’’ শোভনবাবুর আইনজীবীর আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।
শোভনবাবু পর্ণশ্রী থানায় যে-অভিযোগ করেছেন, সেই মামলায় রত্নাদেবী এবং অন্য তিন জন এ দিনই আলিপুর আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন নেন। আলিপুর জেলা বিচারক সম্প্রতি ওই মামলায় আগাম জামিন মঞ্জুর করার পরে নিম্ন আদালতে জামিন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।