মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার দায় সরাসরি ‘মার্ক্সবাদী’দের উপরেই চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী ঘুরিয়েফিরিয়ে এই ঘটনার জন্য সিপিএমকেই দায়ী করেছেন। যাদবপুরের ঘটনায় এই প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মমতা। ঘটনাচক্রে, সোমবার দুপুরে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে কন্যাশ্রী দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই সভা থেকে এ প্রসঙ্গে কোনও কথাই বলেননি। পরে সন্ধ্যায় তিনি বেহালার ম্যান্টনে দলীয় একটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। সেখানে মমতা বলেন, ‘‘যারা ছেলেটাকে উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, তারা সব মার্ক্সবাদী। এরা কখনও বিজেপি, কখনও কংগ্রেস।’’ তৃণমূলনেত্রী আরও বলেন, ‘‘ওখানে কিছু আগমার্কা সিপিএম আছে। তারা ছেলেটার জামাকাপড় পর্যন্ত খুলে নিয়েছিল।’’
মুখ্যমন্ত্রী যাদবপুরকে ‘আতঙ্কপুর’ বলেও কটাক্ষ করেছেন সোমবার। তাঁর কথায়, ‘‘যাদবপুরের ওই ছেলেটির হাতে একটা মাদুলি ছিল। ওরা বলেছিল সেটা খুলতে হবে। যেন জমিজারি। ওটা যেন ওদের রেড ফোর্ট!’’ এর পরেই যাদবপুরকে ‘আতঙ্কপুর’ বলে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ওখানে পুলিশ ঢুকতে দেয় না। সিসিটিভি লাগাতে দেয় না। র্যাগিং করে। যাদবপুর এখন আতঙ্কপুর। অনেক জায়গায় গেলেও, যাদবপুরে আমি যেতে চাই না।’’
এর আগে মৃত ছাত্রের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সে প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওর বাবার সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। বগুলা থেকে কত স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এসেছিল। কত স্বপ্ন নিয়ে ছেলেটার নাম রেখেছিল!’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নিজের ধারণার কথাও বলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ওরা (যাদবপুরের পড়ুয়ারা) হয়তো পড়াশোনায় ভাল। তবে পড়াশোনায় ভাল হলেই সব হয় না।’’ সেই সঙ্গে মমতা জানান, যাদবপুরের সবাই যে খারাপ, তা তিনি মনে করেন না।
মমতার ‘মার্ক্সবাদী’ মন্তব্যের পাল্টা বলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘যারা ছেলেটাকে মেরেছে তাদের গুরুদের মমতা জঙ্গলমহলে পাঠিয়েছিলেন সিপিএমকে খুন করার জন্য। ওই মার্ক্সবাদীদের উনি নিজের দলেও ঢুকিয়েছিলেন, মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আর এখন গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’ সেলিমের আরও বক্তব্য, ‘‘পুলিশ কেন খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত করছে না?’’
যাদবপুরকাণ্ডে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তিন জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি হস্টেলের আরও ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে পুলিশ। বহু প্রাক্তনীও এই ঘটনার পর নেট মাধ্যমে হস্টেলের ‘বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা’র কথা লিখেছেন। এমনিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাম রাজনীতির ‘গড়’। সেটা বহুলাংশেই দলহীন এবং স্বাধীন বামপন্থা। আবার কিছু বিভাগে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনেরও জোর রয়েছে। রাজনীতির বৃত্তে ঘোরাফেরা করাদের একটা অংশের মতে, মমতা সোমবার বামপন্থীদের কাঠগড়ায় তুলতে চেয়েছেন সে কারণেই।