বাজারের ব্যাগে আগুন!
কমা তো দূর, উল্টে শহরের বাজারগুলিতে প্রতি দিন শীতের আনাজের দাম বেড়েই চলেছে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, কড়াইশুঁটি থেকে টম্যাটো— দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। পাইকারি আনাজ ব্যবসায়ী বা খুচরো বিক্রেতা এমনকী চাষিরাও জানাচ্ছেন, চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আনাজের জোগান নেই। তাই এখন গত বছরের তুলনায় সব আনাজেরই দাম ৪০-৬০ শতাংশ বেশি।
এ বছর নিম্নচাপের কারণে বারবার রাজ্যের সর্বত্রই চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীতের শুরুতেই চাষিরা যে সব আনাজ লাগিয়েছিলেন, প্রথম ধাপে তার বেশিরভাগই বৃষ্টি এবং খারাপ আবহাওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে নতুন করে যে সব জায়গায় বীজ বপন করা হয়েছিল তাতে এক দিকে ফলনও কম হয়েছে আবার ফসল ফলতেও সময় লাগছে।
বৃহস্পতিবার দমদম, গোরাবাজার, মানিকতলা, সল্টলেকের বাজার, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট— প্রতিটি বাজারেই ছোট ফুলকপি বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৫ টাকায়। একটু বড় হলেই ২৫-৩০ টাকা দাম হেঁকেছেন বিক্রেতারা। ২৫ টাকার নীচে দেখা মিলছে না বাঁধাকপির। গত বছর এই সময়ে টম্যাটো বিক্রি হয়েছিল ৮-১০ টাকা কেজিতে। এ বছর তার দাম ৩০ টাকার নীচে নামেনি। কড়াইশুঁটি ৪০ টাকা কেজি, ৬০ টাকা কেজির নীচে দেখা মিলছে না বেগুনের। লঙ্কার কেজি বহু দিন ধরে ১০০-১২০ টাকা।
ভাঙড়ের কাশীপুর অঞ্চলের চাষি আব্দুর রসিদ জানালেন, নিম্নচাপে প্রথম বার আনাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, সব মাঠে আর আনাজ লাগানো হয়নি। আবার পরে যা লাগানো হয়েছে তা এখনও পুষ্ট হয়নি। ফলে তাঁরাও মাঠ থেকে যেটুকু আনাজ তুলছেন, তার দাম কিছুটা চড়া হচ্ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, একটি ফুলকপি বড় হয়ে উঠতে কমপক্ষে ৪৫-৫০ দিন সময় লাগে। বাঁধাকপির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৭০দিন। কিন্তু শীতের আনাজের ঢালাও ফলন হওয়ার সময় এ বছর পাওয়া যায়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের মতে, শুধু নিম্নচাপের বৃষ্টিই নয়, হঠাৎ করে প্রবল ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণেও বহু আনাজের ক্ষেত্রে পরাগ মিলন ঠিক মতো হয়নি। কারণ এই মিলনের কাজটা যে সব কীটপতঙ্গ করে থাকে, আবহাওয়ার কারণে তারাও স্বাভাবিক ছন্দে ছিল না। ফলে বেগুনের মতো বহু শীতের আনাজের ফলন এই সময়ে মার খেয়েছে। তাঁর দাবি, এই ধরনের পরিবেশের কারণে অনেক সময় আনাজ পুষ্ট হওয়ার আগেই বৃন্ত থেকে খসে যায়।
দমদম গোরাবাজার অঞ্চলের অন্যতম বড় পাইকারি ব্যবসায়ী প্রহ্লাদ দেবনাথ-সহ আরও অনেকে হাবড়া-অশোকনগর, বনগাঁ, মছলন্দপুরের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি আনাজ কিনে আনেন। তাঁদেরও বক্তব্য, শীতে আনাজের এমন আগুন বাজার তাঁরাও অনেক দিন দেখেননি। চাষিরা যে দাম বলছেন, সেই দামেই আনাজ কিনতে হচ্ছে। কারণ চাহিদার তুলনায় জোগান অত্যন্ত কম। প্রহ্লাদবাবুর কথায়, গত বছর তাঁরা জানুয়ারি মাসেই পাইকারি দরে বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন ৪-৫ টাকা কেজিতে। ফুলকপি বড়জোর ৪-৫ টাকা পিস। আর এ বছর বাঁধাকপির পাইকারি দরই যাচ্ছে ১৫-১৬ টাকা কেজি।
কলকাতার মধ্যে আনাজের সবথেকে বড় পাইকারি বাজার কোলে মার্কেট। সেখানকার ব্যবসায়ীদেরও বক্তব্য, আনাজের টানাটানিতেই বাজার প্রতি দিন চড়া হচ্ছে। তবে চড়া রোদ ও কুয়াশাহীন ঠান্ডার জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে আনাজের ফলন বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।