অর্ণব দাম। — ফাইল চিত্র।
সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শুক্রবার আবার তার গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে গেলেন জেলবন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নথিপত্র যাচাই (ভেরিফিকেশন) করে দেখা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পিএইচডির ক্লাস শুরু হবে। অর্ণব জানিয়েছেন, এখন গবেষণাতেই মনোনিবেশ করবেন।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত সোমবার অর্ণবের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচিডিতে ভর্তির কাউন্সেলিং হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সঙ্গে ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। এর পর শুক্রবার আবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ বর্ধমান জেলা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে চাপিয়ে অর্ণবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর নথিপত্র খতিয়ে দেখা হয়।
এই প্রসঙ্গে ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, ‘‘শুক্রবার ভেরিফিকেশন কমপ্লিট হল। আগামী সপ্তাহ থেকেই ক্লাস শুরু হবে। সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস হবে।’’ নাসরিন জানিয়েছেন, অর্ণব সামাজিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন। এখনও তাঁর গবেষণার গাইড ঠিক হয়নি। কোর্সওয়ার্কের প্রক্রিয়া চলছে। সেই প্রক্রিয়া মিটলে ‘বোর্ড অব রিসার্চ স্টাডিজ়’-এর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গাইড ঠিক করা হবে। অধ্যাপক এ-ও জানিয়েছেন, এখন যে হেতু অর্ণব বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিভুক্ত ছাত্র, তাই তাঁর লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।
গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরার মধ্যে ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে দেখা যায়, ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন অর্ণব। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন তিনি। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মেধাতালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সেলিংয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত থাকছে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অর্ণবের গবেষণায় বাধা দিচ্ছেন। উপাচার্য গৌতম চন্দ্র অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, হুগলি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে দু’টি বিষয় তিনি জানতে চেয়েছেন। জবাব পাননি বলেই বিষয়টি আটকে রয়েছে। প্রসঙ্গত, সে সময় হুগলি জেলে ছিলেন অর্ণব। জেল সূত্রে জানা যায়, সেই চিঠি কারা দফতরকে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের কারামন্ত্রী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়ে দেন, অর্ণবের গবেষণার বিষয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাঁকে বর্ধমান সংশোধনাগারে সরানো হবে বলেও জানিয়ে দেন। উপাচার্যের চিঠির জবাব পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও জানান তিনি। এই আবহে উপাচার্যকে ফোন করে কথা বলেন কুণালও। গত রবিবার দুপুরে অর্ণবকে হুগলি জেলা সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান জেলা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আনা হয়। সোমবার তিনি ভর্তি হন পিএইচডিতে।
২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলা হয়। সে দিনের হামলায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ান নিহত হয়েছিলে। পাঁচ জন মাওবাদীও মারা গিয়েছিলেন। শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে অর্ণবকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল, তার পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলীর চুঁচুড়া সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরি রয়েছে। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা করেন। অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার তিনি আর্জি জানান। বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। এ বার গবেষণা শুরু করলেন অর্ণব।