তাপস চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
চার বছর আগে সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে পতাকা নিয়েছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। দল তাঁকে বিধাননগরে ডেপুটি মেয়র করে। তৃণমূলের অন্দরে তাপসবাবুকে তাই অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু এখনও তৃণমূলের পুরনোদের কাছে তাঁর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ প্রশ্নাতীত নয়। তাই সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা হলেও পরবর্তী মেয়র পদে তাপসবাবুকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেরই অমত মঙ্গলবার আরও জোরদার হয়েছে। প্রকাশ্যে মেয়র হতে চাওয়ার কথাও বলছেন একাধিক মেয়র পারিষদ।
বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী এক সময় সল্টলেক পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন। তিনি সোমবারই জানিয়েছেন, তাঁর মেয়র হওয়ার বাসনা আছে। মঙ্গলবার সেই তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করলেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তি তাপসের ক্ষেত্রে আপত্তি রয়েছে। দল সিদ্ধান্ত নিলেও প্রতিবাদ জানাব। বিগত দিনে সল্টলেক, রাজারহাট-গোপালপুরে সিপিএমের অত্যাচারের কথা মনে পড়ছে। দল চাইলে আমিও মেয়র হতে পারি।’’
কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে জমা দিচ্ছেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
শুধু এই দু’জনেই নয়। তাপসবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজারহাট-গোপালপুরের এক কাউন্সিলর এবং এক জন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আর এক কাউন্সিলরের নামও হাওয়ায় ঘুরছে। তবে এঁদের কেউই মুখে কিছু বলেননি।
এ দিকে, মেয়র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট নাম সামনে না রেখে কাউন্সিলরদের উপরেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইছেন বলে দলের একটি সূত্রের খবর।
পাশাপাশি, আরও একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জল্পনাও হিসেবের বাইরে নেই। সেটি হল, অনাস্থা নিয়ে ভোটাভুটিতে যদি সব্যসাচীকে সরে যেতে হয়, তা হলে পরবর্তী মেয়র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আবার কোনও নতুন ‘জোট’ তৈরি হবে কি? সে ক্ষেত্রে সব্যসাচীর কোনও ‘সক্রিয়’ ভূমিকা থাকবে কি না, তা নিয়েও চিন্তা আছে। তৃণমূলের এক বড় নেতার মন্তব্য, ‘‘দলে পুরনোদের যদি আনুগত্যের পরীক্ষা দিতে হয়, তার পরিণতি সম্মানের হবে না।’’
খাস সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য অভিমত, মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই এলাকার ‘আবেগ’কে বিবেচনায় রাখা হোক। বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বিধাননগর ও রাজারহাট- গোপালপুর সংযুক্তিকরণের সময় আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলাম। মেয়র নির্বাচনের বিষয়টি শাসক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বিধাননগরের ভাবাবেগকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।’’
যদিও এ সব বিতর্কে মধ্যে এখন মাথা ঘামাতে রাজি নন তাপসবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে মেয়রের বিরুদ্ধে কাউন্সিলররা সরব হয়েছেন। এখন প্রথম কাজ বর্তমান মেয়রকে সরানো। পরে দল এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুসারে কাজ করা হবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।