—প্রতীকী ছবি।
আলুর দাম ২০ টাকা ছাড়িয়েছে, কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল। আদা, রসুন, লঙ্কা, ঝিঙের দামে আগুন। মহার্ঘ মশলাপাতি, জ্বালানি গ্যাস। এই অবস্থায় বরাদ্দ টাকায় পড়ুয়াদের উপযুক্ত মানের মিড ডে মিল খাওয়াতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্কুলের।
প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলে প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য বরাদ্দ পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা। ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির জন্য বরাদ্দ আট টাকা ১৭ পয়সা। জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সরকারি, সরকার পোষিত বিদ্যালয়, মাদ্রাসাকে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে পড়ুয়াদের কী খাবার দিতে হবে, তার তালিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে মরসুমি আনাজের পাশাপাশি সপ্তাহে এক দিন ডিম দেওয়ার কথা বলা আছে। বহরমপুর ব্লকের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘আলু-পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা। পটল, বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি। আদা ৩০০-৩৫০ টাকা, কাঁচালঙ্কা ১৫০-২০০ টাকা কেজি। কয়েক মাস আগেও যে পরিমাণ ডাল ৫০ জন পড়ুয়াকে দেওয়া হত, এখন তাতে জল মিশিয়ে ১০০ জনকে খাওয়াতে হচ্ছে। পদে আলু, আনাজ কম দিয়ে ঝোল বেশি করতে হচ্ছে।’’ নওদার এক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ চেপে না রেখে বলেন, ‘‘মিড ডে মিল চালুর উদ্দেশ্য ছিল পড়ুয়াদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যই পূরণ হচ্ছে না বরাদ্দ একই থাকায়। মিড ডে মিলের খাবার দিনে দিনে অখাদ্যে পরিণত হচ্ছে।’’ হরিহরপাড়ার ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম অধিকারী বলেন, ‘‘আনাজ, মশলার দাম বেড়েছে। পড়ুয়াদের খাদ্য তালিকা মেনে মিড ডে মিল দেওয়া কঠিন।’’ পিরতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রশান্ত সরকার জানান, স্কুলের পুষ্টি বাগানে চাষ করা বেগুন, পুঁইশাক দিয়ে তাঁরা অবস্থা সামাল দিচ্ছেন।
শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে বরাদ্দ টাকায় পড়ুয়াদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অসম্ভব। মাঝখানে দু’মাসের জন্য বরাদ্দ বেড়েছিল। তাতে খাবারের মান এবং পড়ুয়াদের উপস্থিতিও বেড়েছিল।’’ তৃণমূলের শিক্ষক নেতা অরুণ বিকাশ দামও বলেন, ‘‘এই বরাদ্দে মিড ডে মিল চালানো সম্ভব নয়। অধিকাংশ স্কুলে শিক্ষকেরাই পকেট থেকে টাকা দিয়ে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করছেন।’’
পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের বিষয়টি দেখভাল করে সমগ্র শিক্ষা মিশন। ওই মিশনের জেলা শিক্ষা আধিকারিক (ডিইও) অনন্যা ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এ নিয়ে সমস্যার কথা বলছেন ঠিকই। তবে সরকারি ভাবে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা দিয়েই খাদ্য তালিকা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।’’