— ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুম হোক বা সপ্তাহান্তের ছুটি— বাঙালির প্রিয় গন্তব্য দিঘা। ভিড় সামলাতে পুলিশ-প্রশাসনও তৎপর থাকে বলেই দাবি। সেই দিঘায় নজর এড়িয়ে দিন তিনেক ধরে সন্দেহভাজন দুই আইএস জঙ্গি লুকিয়ে থাকল কী করে, সে প্রশ্নেই শোরগোল পড়েছে।
নিউ দিঘার যে হোটেল থেকে দুই জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে, সেটি ‘দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদে’র (ডিএসডিএ) মূল প্রশাসনিক ভবনের উল্টো দিকে। দিঘা থানাও বিশেষ দূরে নয়। সূত্রের দাবি, সেখানে নাম পাল্টে, জাল পরিচয়পত্র দেখিয়ে উঠেছিল ওই দু’জন। তবে তা নিয়ে মুখে কুলুপ হোটেলের মালিক থেকে কর্মচারীদের। হোটেল মালিকের ছেলে আয়ুষ কুমার শুধু বলেন, ‘‘হোটেলের রেজিস্টার পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।’’
ওল্ড এবং নিউ দিঘায় ছোট-বড় মিলিয়ে দু’হাজারের কাছাকাছি হোটেল-লজ রয়েছে। সুরক্ষার কথা ভেবেই পর্যটকদের তথ্য (অতিথি রিপোর্ট) জানতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ‘অতিথি অনলাইন পোর্টাল’ চালু করেছে। তার মাধ্যমে প্রতিদিনের তথ্য স্থানীয় থানায় পাঠানোর কথা হোটেল ও লজ মালিকদের। থানা থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষকে ‘ইউজ়ার নেম’ এবং ‘পাসওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে ভিসা, পাসপোর্টের তথ্যও আপলোড করার কথা। ঠিকঠাক করলে, পোর্টালে ‘গেস্ট রেজিস্ট্রেশন ভিউ’ অপশনে গিয়ে থানার আধিকারিকেরা হোটেলের পর্যটকদের তথ্য পেতে পারেন।
এ নিয়ে দিঘা, দিঘা মোহনা, রামনগর, জুনপুট এবং মন্দারমণি উপকূল থানাকে বিশেষ নির্দেশিকাও পাঠিয়েছিল জেলা পুলিশ। তা যে মানা হচ্ছে না, জঙ্গি গ্রেফতারে সেটাই সামনে এসেছে। যদিও দিঘা-শঙ্করপুর হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পুলিশের পোর্টালে নিয়মিত পর্যটকদের নাম-পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করা হয়।’’ জেলা পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট (ড্রাগ অ্যান্ড থেরাপিউটিক) আবুনুর হোসেনেরও দাবি, ‘‘অধিকাংশ হোটেল নিয়মিত তথ্য আপলোড করে।’’ ধৃতদের তথ্য কি আপলোড করা হয়েছিল? মন্তব্য করতে চাননি ডিএসপি।
দিঘা, মন্দারমণিতে আগেও পর্যটকদের তথ্য যাচাই করা হত। তখন সচিত্র পরিচয়পত্র দেখে তাঁদের নাম-ঠিকানা, হোটেলে আসা-যাওয়ার তারিখ, সব রেজিস্টারে লেখা হত। ওই খাতা ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষকে পাঠাতে হত। ডিএসডিএ তরফেও মাঝেমধ্যে হোটেলে গিয়ে রেজিস্টার দেখা হত। পুলিশের পোর্টাল চালুর পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ। কাঁথির মহকুমাশাসক তথা ডিএসডিএ’র এগজ়িকিউটিভ অফিসার শৌভিক ভট্টাচার্য মানছেন, ‘‘নতুন পোর্টাল সম্ভবত বাধ্যতামূলক নয়। যে হেতু পুলিশ ওই পোর্টাল চালু রেখেছে, তাই পর্ষদ আগের চালু নিয়ম বন্ধ রেখেছে।’’
মনে করা হচ্ছে, সমন্বয়ের ফাঁক গলেই অপরাধীদের নিরাপদ ঠিকানা হয়ে উঠছে সৈকত শহর। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে দিঘায় প্রচুর গাঁজা সমেত ৭ জন গ্রেফতার হয়। নদিয়ার তাহেরপুরের এক যুবতীকে খুন করে দিঘার অদূরে তাজপুর সৈকতে ফেলে পালিয়েছিল তাঁর এক আত্মীয়।