R G Kar Hospital Incident

‘আমরা তো ডাক্তারদের আন্দোলনে পাশে থেকেছি, তা হলে এই ভোগান্তি কেন?’ প্রশ্ন রোগীর পরিজনদের

কর্মবিরতির জেরে আবারও রোগী ভোগান্তির ছবি ফুটে উঠল শহরে। প্রায় সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেই তেমন ভাবে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুললেন রোগীর পরিজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৫
Share:

বাগুইআটির ঋজু সাহা নামে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর রাইলস টিউব পাল্টাতে এসে হেনস্থার মুখে পরিবার। আর জি কর হাসপাতালে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

আংশিক নয়, জুনিয়র চিকিৎকদের পুরোপুরি কাজে ফেরার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি সুনিশ্চিত না হওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার থেকে ফের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির পথে হাঁটতে শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সেই কর্মবিরতির জেরে আবারও রোগী ভোগান্তির ছবি ফুটে উঠল শহরে। প্রায় সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেই তেমন ভাবে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুললেন রোগীর পরিজন। তাঁদের অনেকেরই কথায়, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই ডাক্তারদের আন্দোলনে পাশে থেকেছি। তা হলে আমাদের এই ভোগান্তি কেন? সাধারণ মানুষের কথাও তো ওঁদের ভাবতে হবে।’’ তবে জেলায় সব মেডিক্যাল কলেজে পূর্ণ কর্মবিরতি হয়েছে তেমনটাও নয়।

Advertisement

আর দিন কয়েক পরেই দুর্গাপুজোর শুরু। সেই সময়ে অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালেই অনেক চিকিৎসক ছুটিতে থাকেন। বন্ধ থাকে তাঁদের ব্যক্তিগত চেম্বারও। সেই সময় ভরসা থাকে সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করায় চিকিৎসা-পরিষেবা পাওয়া নিয়ে বড়সড় সংশয় তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান শেষে জরুরি পরিষেবায় যোগ দিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচার এবং তার পরবর্তী সময়ে অন্তর্বিভাগে গিয়েও রোগী দেখছিলেন তাঁরা। তবে বহির্বিভাগে উপস্থিত থাকছিলেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু পুজোর সময়ে সেই জরুরি পরিষেবার পুরোটাই সিনিয়র চিকিৎসকেরা আদৌ সামাল দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রোগীর পরিজনের মধ্যেই।

এ দিন শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের রোগী ভোগান্তির ছবি যেন সেই সংশয়কে আরও উস্কে দিচ্ছিল। যেমন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে শয্যায় শোয়ানো এক বয়স্ক রোগীর স্যালাইনের বোতল হাতে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর এক প্রতিবেশী বলরাম সিংহ। বললেন, ‘‘স্যালাইনের বোতল খালি হয়ে গেলেও, কে বদলাবেন বুঝতে পারছি না। কেউই তো আসছেন না।’’ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলের রাইলস টিউব বদলানোর জন্য কাউকে না পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন বাগুইআটির পারমিতা সাহা। জানালেন, দিন সতেরো আগে তাঁর ছেলে আর জি করে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি হয়েছিল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। ছুটির সময়ে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, পরে এসে রাইলস টিউব বদলে নিতে। সে জন্য এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ ওই মেডিক্যাল কলেজের ট্রমা কেয়ারে চলা জরুরি বিভাগে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন পারমিতা। বললেন, ‘‘প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে শুধু বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে পাঠাচ্ছে। আমরাও ঘুরে যাচ্ছি। কিন্তু কেউ রাইলস টিউব পাল্টে দিচ্ছেন না।’’ শেষে বিরক্ত হয়ে ওই বালককে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন পারমিতা ও তাঁর স্বামী।

Advertisement

দুর্ঘটনায় জখম হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর আর জি করের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর আত্মীয় ষষ্ঠীপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আগে তাও দিনে এক-দু’বার দেখছিলেন চিকিৎসকেরা। আজ তো সকাল থেকে কেউ এলেনই না। আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব তা হলে?’’ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে অপেক্ষার পরে স্নায়ু রোগে আক্রান্ত বনশ্রী রায়কে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন তাঁর পরিজন। বললেন, ‘‘আসানসোল থেকে ছ’হাজার টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনও চিকিৎসককে দেখাতে পারলাম না।’’ এ দিন সকালের দিকে জরুরি পরিষেবায় তেমন সমস্যা না হলেও বেলা গড়াতেই জরুরি বিভাগে রোগীর পরিজনের অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কারণ দুপুর থেকে সর্বত্রই জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন। ন্যাশনাল মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে এক রোগীকে পরীক্ষা করার ফাঁকে এক জুনিয়র চিকিৎসক বললেন, ‘‘যে ক’জন রোগী এই মুহূর্তে রয়েছেন, তাঁদের দেখে নিতে হবে। তার পরে আর কাজ করব না।’’

কল্যাণী জেএনএম-এর জুনিয়র চিকিৎসকেরা এ দিন সন্ধ্যায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা আংশিক কর্মবিরতি চালাবেন। আবার, বর্ধমান মেডিক্যাল, বাঁকুড়া মেডিক্যালে এ দিন কোনও কর্মবিরতি হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে আংশিক কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। ইন্টার্নেরা কোনও কাজ না করলেও বাকি সমস্ত চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ সর্বত্র পরিষেবা দিয়েছেন। অন্য দিকে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কোচবিহার মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তবে উত্তরবঙ্গ ও মালদহ মেডিক্যালে শুরু হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement