—ফাইল চিত্র।
খরচ বেড়েছে বছর বছর। পরিবার-পিছু কাজ পাওয়ার দিনের সংখ্যাও বাড়ছে তাল মিলিয়ে। কিন্তু গত পাঁচ বছরের হিসেব বলছে, এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক পরিবার। প্রতি বছরই ওই প্রকল্পে কাজ চেয়ে আবেদনের সংখ্যা কমছে বলে পঞ্চায়েত দফতরের দাবি।
গ্রামের মানুষ ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করতে চাইছেন না কেন? কেনই বা পঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে আবেদনের সংখ্যা কমছে? পুরো বিষয়টির বিচার বিশ্লেষণেও বসছেন পঞ্চায়েতকর্তারা। তাঁদের অধিকাংশের মতে, রাজ্যে গত আট বছরে সরকার সামাজিক উন্নয়নে যে-বিপুল টাকা খরচ করেছে, তার প্রভাব গ্রামে পড়েছে। নানান সরকারি প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তা তৈরি হয়েছে বিপুল সংখ্যায়। ফলে দু’টাকা কিলোগ্রাম চাল থেকে, চাষির জন্য সহায়তা, কন্যাশ্রী-সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়ে পরিবর্তন এসেছে গরিবদের জীবনেও। সরকারের পাকা চাকরি না-হলেও সিভিক ভলান্টিয়ার, বিভিন্ন প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক, রক্ষী, আশাকর্মী বা আইসিডিএস কর্মীদের বেতন বেড়েছে। অনেক গরিব পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পে বেতনভুক হয়েছেন। ফলে ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ অনেক পরিবারই আর করতে চাইছে না। সেই জন্যই আবেদনের সংখ্যা কমছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছর আগে, ২০১৫-১৬ সালে রাজ্যে ৬৫ লক্ষ পরিবারের এক কোটি দু’লক্ষ মানুষ ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ২০১৮-১৯ সালে কাজ চান ৪৭ লক্ষ ৪৯ হাজার পরিবারের ৮৪ লক্ষ মানুষ। আর চলতি আর্থিক বছরে জানুয়ারি পর্যন্ত ওই প্রকল্পে কাজ চেয়েছেন ৪৫ লক্ষ পরিবারের ৬৬ লক্ষ মানুষ। অর্থাৎ পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যে মাটি কাটার কাজ করতে আগ্রহ হারিয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ পরিবারের ৩৪ লক্ষ মানুষ।
সরকারি তথ্য বলছে, কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা কমলেও রাজ্যে প্রতি বছর কাজ দেওয়ার খরচ এবং পরিবার-পিছু কাজের দিনের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। অর্থাৎ রাজ্যে কাজ প্রাপকের সংখ্যা কমলেও কাজের বহর কমেনি। সেই জন্যই পরিবার-পিছু কাজের দিনের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৫-১৬ সালে গড়ে পরিবার-পিছু ৪৭ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৭ দিন। ব্যতিক্রম ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষ। পঞ্চায়েত দফতরের খবর বিধানসভা ভোট থাকায় ওই বছর প্রায় ছ’মাস কোনও প্রকল্পেরই কাজ হয়নি।
আরও পড়ুন: আবার স্টিং অপারেশনের তোড়জোড়!
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যে গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছেছে, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চাওয়ার হার কমে যাওয়াটাই তার প্রমাণ। গত আট বছরে চাকরির বাজার যে-ভাবে বেড়েছে, তাতে মানুষ মাটি কাটার কাজ করবে কেন?’’ সুব্রতবাবু জানান, ভিন্ রাজ্যে লোকে চলে যাচ্ছে বলে অনেকে অপবাদ দিলেও তা ঠিক নয়। কারণ, এ রাজ্যেই কর্মসংস্থানে সরকার অনেক পদক্ষেপ করছে।