মনোতোষের অস্ত্র কিনেই পাচার

গোটা তিনেক ওয়ানশটার আর খানচারেক দেশি অটোম্যাটিক পিস্তল। সেই সঙ্গে বেশ কিছু কার্তুজ। এ-পার বাংলা থেকে কেনা অন্তত এই সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট সীমান্ত টপকে চোরাপথে ও-পারে পাচার করেছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা সাবেক আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সদস্যেরা।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:২০
Share:

গোটা তিনেক ওয়ানশটার আর খানচারেক দেশি অটোম্যাটিক পিস্তল। সেই সঙ্গে বেশ কিছু কার্তুজ। এ-পার বাংলা থেকে কেনা অন্তত এই সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট সীমান্ত টপকে চোরাপথে ও-পারে পাচার করেছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা সাবেক আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সদস্যেরা।

Advertisement

২১ নভেম্বর ওই সংগঠনের দুই সদস্য কলকাতা রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার হওয়ার মাসখানেক আগেই পশ্চিমবঙ্গে কেনা অস্ত্র বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ওই সব অস্ত্র কেনা হয়েছিল বসিরহাটের বাসিন্দা, অস্ত্রের কারবারি মনোতোষ দে ওরফে জিয়ারুল গাজির কাছ থেকে। প্রতিটি ওয়ানশটারের জন্য সাত হাজার এবং প্রতিটি দেশি অটোম্যাটিক পিস্তলের জন্য প্রায় ২৭ হাজার টাকা দিয়েছে জঙ্গিরা।

এক গোয়েন্দা জানান, মনোতোষ বিহারের মুঙ্গের থেকে অটোম্যাটিক পিস্তল এনেছিল আর স্থানীয় ভাবে ওয়ানশটার জোগাড় করে বিক্রি করেছিল আনসারের সদস্যদের।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, ওই জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে-সব মুক্তমনা ব্লগারকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের ‘কোতল’ করা হয়েছে মাথায়, গলায় চপার মেরে। তা হলে আনসারের সদস্যেরা পশ্চিমবঙ্গে এসে মোটা টাকা দিয়ে মনোতোষের মতো অস্ত্র-কারবারির কাছ থেকে অস্ত্র কিনে পাচার করেছে কেন? কেনই বা তারা বিস্ফোরক তৈরির উদ্দেশ্যে কলকাতা তথা রাজ্যে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সংগ্রহ করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল? গোয়েন্দাদের দাবি, আগ্নেয়াস্ত্র বা বোমা, কোনওটাই ‘টার্গেট’ (এ ক্ষেত্রে মুক্তমনা ব্লগার)-এর উপরে আঘাত হানার জন্য নয়। ছুরি বা চপার দিয়ে তাঁকে আঘাত করার পরে আতঙ্ক ছড়াতেই ওই সব হাতিয়ার দরকার।

২০১৫-র ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে খুন হন ‘মুক্তমনা’ অভিজিৎ রায়। অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদাকে দুর্বৃত্তেরা কুপিয়েছিল। সেই হামলার অব্যবহিত পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে অন্তত পাঁচটি বিস্ফোরণ হয়। তার পরে আরও দু’টি বিস্ফোরণ হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে।

সে-বছর ৭ অগস্ট ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে চার দুর্বৃত্ত হানা দেয়। গোয়েন্দারা জেনেছেন, পরপর ব্লগার হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবল চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ সরকার আনসারের বহু নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। একই সঙ্গে সে-দেশে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের সংযোগ বা লাইনটা গিয়েছে কেটে। সেই জন্যই আনসার সীমান্তের এ-পার থেকে বন্দুক ও বিস্ফোরক জোগাড় করছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। আনসারের খতম তালিকায় আছেন ৮৪ জন ব্লগার, যাঁরা ন’টি ব্লগে লেখালেখি করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement