সুবীর পাল।
শুক্রবার রাতেই তাঁর ফোন এসেছিল স্ত্রী শম্পা পালের কাছে। তখন কথা বলেন ছোট দুই মেয়ের সঙ্গেও। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে, ভাবতেও পারেননি ওঁরা কেউ। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ মণিপুরের থিংঘাতের রাস্তায় যখন সেনা কনভয় ঢোকে, তখন তারই একটি গাড়িতে ছিলেন হাবিলদার সুবীর পাল। আচমকা জঙ্গি হানায় ঝাঁঝরা হয়ে যায় কনভয়ে থাকা অাসাম রাইফেলসের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল বিপ্লব ত্রিপাঠীর পরিবার। মোট সাত জন প্রাণ হারান এই হামলায়। সুবীর গুরুতর জখম হন।
শনিবার রাতে অাসাম রাইফেলসের পক্ষ থেকে ফোন আসে কোচবিহার শহরের থেকে কিছু দূরে ঢাংডিংগুড়ির মরান্যত্যাড়া গ্রামে পালেদের বাড়িতে। তার পর থেকে সুবীরের স্ত্রী শম্পা, মা গীতারানি মুর্ছা যাচ্ছেন বারবার। সুবীরের দাদা প্রবীর বলেন, ‘‘ভাবতে পারছি না! এমন ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ গীতারানি কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘‘ছেলের উপরে হামলার বিচার চাই।’’ উৎকণ্ঠিত পরিবারের সকলের কাছে এখন একটাই প্রশ্ন— সুবীর কেমন আছেন? পরিবার ও পড়শিদের কাছ থেকেই জানা গেল— মণিপুর থেকে যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন, সুবীর এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তাঁর সঙ্কট এখনও কাটেনি। যদিও পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলেও জানানো হয়েছে পরিবারকে। মণিপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সুবীর।
স্পষ্ট করে কিছু জানা যাচ্ছে না বলেই সকলের উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। প্রবীর বলছিলেন, ‘‘সুবীর খুব ভাল ছেলে। এলাকায় সকলের সাহায্যে এগিয়ে যায়। তাই সকলেই তাকে ভালবাসে।’’ পড়শিদেরও এক কথা, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ হয়ে উঠুক সুবীর।’’
পড়শিদেরই কেউ কেউ জানালেন, একটা সময়ে সুবীর-প্রবীররা কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। বছর পনেরো আগে আসাম রাইফেলসে চাকরি পান সুবীর। তার পরে কিছুটা স্বস্তি আসে সংসারে। সুবীরও যখন গ্রামে ফিরতেন তখন সকলকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতেন তিনি। পরিবারের লোকেরাই জানালেন, মাস দুয়েক আগেই বাড়ি ঘুরে গিয়েছেন সুবীর। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণা সরকারের স্বামী উজ্জ্বলও জানিয়েছেন, ‘‘সুবীরের যে মারাত্মক কিছু হয়নি, সেটাই রক্ষা। উনি তো ছুটিছাটায় গ্রামে এলেই সকলকে নিয়ে হইচই করতেন। আমি আশা করব, উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’