মানিক তালুকদার। —নিজস্ব চিত্র।
বাজনার শব্দে কাঁপল চারপাশ। পরপর ফাটল আতসবাজি। যেন ফের দীপাবলির আমেজই ফিরে এলে শুক্রবার সন্ধ্যায় কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বলরামপুর গ্রামে। কারণ, ঘরের ছেলে মানিক তালুকদার ঘরে ফিরলেন যে, সতেরো দিনের ‘যুদ্ধ’ জয় করে।
কেউ ভেবেছিলেন, উত্তরকাশীর সিলকিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার পেতে আরও সময় লাগবে মানিকদের। ফলে কঠিনতর হবে লড়াইটা। শীত বেড়ে গেলে সব অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, এমন আশঙ্কাও করছিলেন কেউ কেউ। সব আশঙ্কাকে সরিয়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরেছেন মানিক। তাঁর লড়াকু মানসিকতা মন জয় করেছে বলরামপুরের সবার। তাঁকে চোখের দেখা দেখতে মানিকের বাড়িতে মানুষের ঢল নামল। তা দেখে খুশি মানিক। বললেন, ‘‘খুব আনন্দ হচ্ছে। এ ভাবে মানুষের ভালবাসা পাব, ভাবিনি। আরও ভাল লাগছে গ্রামে ফিরে, বাড়িতে ফিরে, প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে।’’
বাড়িতে ঢুকে স্ত্রী, ছেলেকে কাছে টেনে নিলেন তিনি। বললেন, ‘‘ছেলে স্নাতক। ওর একটা কাজ হলে হয়তো আমাকে আর ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে হবে না। না হলে, সংসার চালাতে তো যেতেই হবে।’’ মানিকের স্ত্রী সোমা বলেন, ‘‘ওঁকে কাছে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি। কী যে আনন্দ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না! স্বামীকে আর কাজে যেতে দিতে ইচ্ছে হয় না। যদি এখানে একটা কাজের ব্যবস্থা হয়, খুব ভাল হয়।’’ মানিকের ছেলে মণি বলেন, ‘‘এ দিনের অপেক্ষাতেই ছিলাম।’’
১২ নভেম্বরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ ধসে আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। ২৮ নভেম্বর রাতে উদ্ধার করা হয় সেই শ্রমিকদের। দু’দিন ঋষিকেশে এমস-এ চিকিৎসার পরে, বৃহস্পতিবার ছুটি দেওয়া হয় মানিককে। ওই রাতেই ঋষিকেশ থেকে দিল্লিতে পৌঁছন মানিক। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন মানিক। সেখান থেকে গাড়িতে সন্ধ্যায় বাড়িতে পৌঁছন। রাজ্য সরকারের তরফেই মানিকের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, বাঙলার আরও দুই ছেলে, পুরশুড়ার জয়দেব ও সৌরভের ফিরতে দেরি হবে।
এ দিন মানিক বলেন, ‘‘ওই ঘটনার আগের রাতে আমরা কাজে গিয়েছিলাম। পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি ছিল। ভোর ৫টায় ধস নামে। প্রথমটায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে নিজেদের মনোবল বাড়িয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সুড়ঙ্গে প্রথম কয়েক ঘণ্টা অক্সিজেনের অভাব ছিল। খাওয়া-দাওয়ারও অভাব ছিল। সে সবের তোয়াক্কা করিনি। গান-কীর্তন, খেলায় সময় কাটিয়েছি।’’