মানিকের উত্তর মিলছে না! ফাইল চিত্র।
এক সপ্তাহ আগেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটি প্রশ্ন করেছিলেন বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। কলকাতা হাই কোর্টে এজলাসে হাজির মানিকের কাছে বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন, ‘‘এস বসু অ্যান্ড চৌধুরী নামে কোনও সংস্থার নাম জানেন?’’ উত্তরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি বলেছিলেন, তিনি ‘ওই ধরনের নাম’ শুনেছেন। মঙ্গলবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) এই একই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় মানিকের একদা অধস্তন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সচিব রত্না বাগচীকে। ইডি সূত্রে খবর, রত্না তাঁদের জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সবটাই জানেন তাঁর প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন মানিক।
‘এস বসু অ্যান্ড চৌধুরী কোম্পানি’ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে বার বার ঘুরেফিরে এসেছে এই সংস্থার নাম। কখনও হাই কোর্টে, কখনও ইডির তদন্তকারীরা নিজেদের অভিযোগ এই সংস্থার নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য থেকেই জানা যায়, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের উত্তরপত্র বা ওএমআর শিটের মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্ত ছিল ‘এস বসু অ্যান্ড চৌধুরী কোম্পানি’। যেমন এসএসসির ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নাইসা নামের একটি সংস্থাকে। প্রাথমিকের নিয়োগ দুর্নীতিতে যেখানে হাজার হাজার যোগ্য শিক্ষকের নম্বর বদলে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই এই সংস্থাটির ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। মঙ্গলবারও নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রত্নাকে ডেকে পাঠানোর পর তদন্তকারী সংস্থা ইডি মূলত এই সংস্থাটি নিয়েই প্রশ্ন করে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু রত্না এ বিষয়ে কোনও জবাব দেননি। উল্টে বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে সব কিছুই জানেন মানিকবাবু।’’ যিনি ঘটনাচক্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে ছিলেন রত্নার ‘বস’।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে, কিছু দিন আগেই পর্ষদের অফিসে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থাটির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্ষদের কাছ থেকে প্রথমে নথি চাওয়া হয়েছিল ইডির তরফে। সেই নথি হাতে না আসায় পর্ষদের অফিসে অভিযান চালান তদন্তকারীরা। ইডি সূত্রে খবর, পর্ষদের দফতরের এক চুক্তিভিত্তিক কর্মী অর্ণব বসুর উপর সন্দেহ পড়ে ইডির।তাঁর মোবাইল এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করার পর ইডির সন্দেহ হয়, অর্ণব প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন চ্যাটে তার প্রমাণও মেলে বলে ইডি সূত্রে খবর। এমনকি, অর্ণবের সঙ্গে পর্ষদের অন্যদেরও ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে মোবাইলের কথোপকথন পড়ে জানতে পারে ইডি। এর পরই রত্নাকে তলব করা হয় ইডির দফতরে। প্রশ্ন করা হয় ওই ‘রহস্যময়’ সংস্থা এস বসু অ্যান্ড চৌধুরী কোম্পানি নিয়ে।