মানিক ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার সকালেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘অনন্তকাল কাউকে জেলে রাখা যায় না।’’ তবে মানিকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়নি।
বিচারপতি ঘোষের পর্যবেক্ষণ, এই মুহূর্তে মানিককে জামিন দিলে ইডির তদন্তে তার প্রভাব পড়বে। সমাজের উপরেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিচারপতি আরও জানান, হাই কোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে। ফলে এই দুর্নীতির গভীরতা অনেক বেশি। ডিভিশন বেঞ্চ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। তাই এখন মানিক জামিন পেয়ে গেলে তার প্রভাব তদন্তের উপর পড়তে বাধ্য। এই যুক্তিতেই মানিকের জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে।
এই মামলায় মানিকের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়। ইডির আইনজীবী ছিলেন ফিরোজ এডুলজি। মানিকের তরফে দুর্নীতির দায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সকালে শুনানিতে মানিকের আইনজীবী বলেন, ‘‘নিয়োগের জন্য প্যানেল তৈরি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদগুলিকে পাঠিয়ে দেয় পর্ষদ। এমনও তো হতে পারে পর্ষদের তরফ থেকে যে তালিকা পাঠানো হত সেই অনুযায়ী নিয়োগপত্র দেয়নি সংসদ। বদলে অন্য কাউকে নিয়োগের শংসাপত্র দিয়ে থাকতে পারে তারা। ফলে যদি নিয়োগে অনিয়ম হয়ে থাকে তা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের মাধ্যমেও হয়ে থাকতে পারে।’’
বিচারপতি ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘পর্ষদ অনুমতি না দিলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ নিয়োগ করবে কী ভাবে?’’ মানিকের আইনজীবী বলেন, ‘‘জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ যদি কোনও বেআইনি কাজ করে থাকে তা হলে তার দায় পর্ষদের উপরেই বা বর্তাবে কেন?’’
তদন্তে অগ্রগতি প্রসঙ্গে ইডির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, মানিক এবং তাঁর পুত্রের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে অস্বীকার করছে ব্যাঙ্ক। চার বার ওই তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর ফলে তদন্ত সঠিক পথে এগোতে পারছে না। তখনই বিচারপতি ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘তদন্তে অগ্রগতি প্রয়োজন, তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হলে অনন্তকালের জন্য কাউকে জেলে রেখে দেওয়া যায় না।’’ কিন্তু মানিকের জামিনের আবেদন তিনি খারিজ করে দিয়েছেন।