পদে অনড় মানস, ঝুলছে শাস্তির খাঁড়া

দলের হাইকম্যান্ডের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সংঘাতের পথেই অটল থাকছেন মানস ভুঁইয়া। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী জানিয়েছিলেন, হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে মানসবাবুকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:৪৩
Share:

দলের হাইকম্যান্ডের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সংঘাতের পথেই অটল থাকছেন মানস ভুঁইয়া। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী জানিয়েছিলেন, হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে মানসবাবুকে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে সবংয়ের বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক মঙ্গলবার পিএসি-র বৈঠক করেছেন। এবং জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতি শুক্রবার বৈঠক হবে।

Advertisement

মানসবাবু যদি এই পথেই চলতে থাকেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ওঁকে সময় দেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে, উনি শহিদ হতে চাইছেন। কিন্তু ওঁকে আমরা শহিদ হতে দিতে চাই না!’’ যার অর্থ, অধীরেরা আরও কিছুটা সময় দিতে চাইছেন মানসবাবুকে। তার মধ্যে তাঁর মতের পরিবর্তন না হলে সম্ভবত সাসপেনশনের সিদ্ধান্তই নিতে হবে এআইসিসি-কে। সেটা হলে বিধানসভায় দলের হুইপ মানতে বাধ্য থাকবেন মানসবাবু। অন্য দলে যোগ দিতে গেলেও দল-বিরোধী আইন কার্যকর হবে। বহিষ্কার করে দিলে বরং মানসবাবু ‘মুক্ত’ হয়ে যাবেন! প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব যে কারণে এআইসিসি-র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বোঝাচ্ছেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হলেও সেটা যেন বহিষ্কার না হয়।

পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের ৩৯ জন বিধায়ক যে প্রস্তাবে সই করেছেন, তার প্রতিলিপি এ দিনই মানসবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন সেই প্রস্তাব সাদা কাগজে লেখা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মানসবাবু। তিনি বলেছেন, ওই ৩৯ জন বিধায়ককে চিঠি লিখে পাল্টা জানতে চাইবেন তাঁরা কী চান! কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘এটা বিধায়কদের আবেদন। কোনও পরিষদীয় দলের চিঠি নয়। তাই সাদা কাগজে
দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

তা হলে দলের সঙ্গে সংঘাতই চাইছেন মানসবাবু? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘যদি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী বা সি পি জোশী ডাকেন, দিল্লি গিয়ে তাঁদের বোঝাব। আশা করি, তাঁরা বুঝবেন।’’ যা শুনে প্রদেশ নেতৃত্ব বলছেন, হাইকম্যান্ড কী চায়, তা তো বোঝাই যাচ্ছে! তার জন্য সনিয়া বা রাহুলের তলবের দরকার নেই। অধীর বলেছেন, ‘‘পদ আঁকড়ে থেকে উনি গোঁয়ার্তুমি করছেন! এআইসিসি-র নির্দেশ অমান্য করার অর্থ শৃঙ্খলাভঙ্গ। উনি যা করছেন, দিল্লিকে তা জানাব।’’ কংগ্রেসেরই একাংশ অবশ্য মনে করছে, মানসবাবু যা করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই।

মানসবাবুর ডাকা পিএসি-র বৈঠকে এ দিন কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, অসিত মিত্র বা শঙ্কর সিংহেরা কেউ যাননি। ছিলেন না বাম বিধায়কেরাও। আবার শুক্রবার বৈঠক ডাকায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির জন্য সে দিনও তিনি থাকতে পারবেন না বলে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকী, পিএসি-তে তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে রথীন ঘোষ, উদয়ন গুহ-সহ পাঁচ বিধায়ক এ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে কমিটির ২০ সদস্যের মধ্যে ১১ জনই গরহাজির ছিলেন। যদিও মানসবাবু অবিচলিত! তাঁর মন্তব্য, ‘‘কমিটির সব বিধায়ককে চিঠি লিখে তাঁদের সাহায্য চাইব। এই বিধানসভার কমিটির কাজ আমার কাছে পবিত্র। শহিদ মিনার বা কুতুব মিনারের কাছের বাজার নয়!’’

বিধানসভার নবগঠিত কমিটিগুলির চেয়ারম্যানদের নিয়ে আজ, বুধবার বৈঠক ডেকেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মানসবাবু সেখানেও যাবেন। বিরোধী দলনেতা হিসাবে আমন্ত্রিত আব্দুল মান্নান কি সেখানে গিয়ে মানসবাবুর মুখোমুখি হবেন? মান্নান বলেন, ‘‘বৈঠকে যাই কি না, কালই দেখতে পাবেন!’’ তবে কংগ্রেস সূত্রের খবর, যে ভাবে বিরোধী দলনেতার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে স্পিকার মানসবাবুকে চেয়ারম্যান করেছেন, তার পরে মান্নান বৈঠকে যেতে চান না। পাশাপাশি, মানসবাবু মান্নানকে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন এবং মান্নান বলেছেন, তিনি এআইসিসি-র পরামর্শ মেনেছেন মাত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement