কর্কটের কোপেও অমর রইল ওঁদের ভালবাসা

গত ৩ অগস্ট শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন বীথি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

বীথির সঙ্গে সুব্রত। —নিজস্ব চিত্র।

যেমন নকশিকাঁথার মাঠের সাজু-রূপাইয়ের প্রেম গাঁথা। যেমন রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনুর কাহিনি। এ-ও তেমনই এক ভালবাসার গল্প। যে গল্পে স্কুলের গন্ডি না পেরোতেই ক্যানসারে আক্রান্ত হন মেয়েটি। সেই রোগের কাছে হেরে গিয়েও এই গল্প বীথি আর সুব্রতর হার না মানারই। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকার পাশে থেকে, তাঁর শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে বীথির সিঁথিতে সিঁদুর দিলেন সুব্রত। তার পর, সব শেষ।

Advertisement

গত ৩ অগস্ট শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন বীথি। কিন্তু এখনও এই ‘গল্প হলেও সত্যি’ ঘটনাটি আপ্লুত করে রেখেছে দুই পরিবারকে। মারণ কর্কট রোগে আক্রান্ত বীথির সঙ্গে যে ভাবে গত ন’বছর ধরে রয়ে গিয়েছেন সুব্রত, তা কিছুটা হলেও অবাকই করেছে দুই পরিবারকে। এই ক’বছরে তাঁকে সুস্থ করতে পরিবারের সঙ্গে সুব্রতও ছুটেছেন, কখনও মুম্বইয়ে, কখনও বেঙ্গালুরুতে, কখনও বা শিলিগুড়িতে। গত ৩ অগস্ট রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে বিথী। পরিবার সূত্রে বলা হচ্ছে, তাঁর ইচ্ছে ছিল সুব্রতকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার। সে জন্য সেই দুপুরেই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সেই ইচ্ছে পূরণ করেন সুব্রত।

উত্তর দিনাজপুরের টুঙ্গিদিঘির বাসিন্দা সুব্রত কুণ্ডু। বাবা শক্তিপদ কুণ্ডুর চালের ব্যবসা। দুই দাদাও রয়েছেন সেই কারবারে। সুব্রত একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। টুঙ্গিদিঘি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে শিলিগুড়ি আসেন তিনি। বয়েজ হাই স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের মাধ্যমে আলাপ হয় শিলিগুড়ি নেতাজি গার্লস স্কুলের ছাত্রী বীথি দাসের সঙ্গে। ২০০৯ সাল থেকে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। বিপত্তি ঘটে দু’বছর পর। ২০১১ সালে বীথি তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টেস্টের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ডান হাতের কব্জিতে একটি টিউমার থেকে বীথি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিলিগুড়িতে অস্ত্রোপচার করে তা বাদও দেওয়া হয়। তবে বায়োপসি রিপোর্টে ধরা পড়ে, টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট। সেই থেকে লড়াই শুরু।

Advertisement

চিকিৎসার জন্য এক বছর মুম্বইয়ে থাকতে হয় বীথিকে। সেই থেকে সুব্রত কখনও মুম্বই, কখনও শিলিগুড়ি করে চলেছেন। বীথির বাবা কালীপদ দাস রেলের লোকো-পাইলট ছিলেন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি স্বেচ্ছাবসর নেন। সুব্রতর কথায়, কেমো থেরাপির পর ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বীথি সুস্থ ছিলেন। এর পরে রোগ ছড়াতে শুরু করে অন্যত্র। ফের রেডিয়োথেরাপি চালানোর পর আবার তিন বছর সুস্থ ছিলেন। ফের কব্জি এবং কনুইয়ের কাছে একই উপসর্গ। চিকিৎসক হাত কেটে বাদ দিতে বললেন। তাই করা হল। ২০১৮ সালে অক্টোবরে চিকিৎসক বললেন, আর ভয় নেই। বাধা নেই বিয়েতেও। সুব্রতর কথায়, সেই শান্তি বেশি দিন রইল না। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ল গত মার্চে। এর পর চার বার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।

সুব্রত বলছিলেন, কিছুটা ক্লান্ত স্বরেই, ‘‘এ বার আর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement