কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর কোনও রকম ছাড় দেওয়া যাবে না। পঠনপাঠনের সঙ্কট মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য হাল না-ছেড়ে এ বার সরাসরি চিঠি লিখেছেন স্মৃতিকে। আবেদন একটাই, বাংলার স্কুলে অসংখ্য শূন্য পদ পূরণে আরও কিছু দিন প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হোক।
স্কুলশিক্ষকের পদে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগে ছাড় ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ চায়, ওই ছাড়ের সময়সীমা আরও একটু বাড়ানো হোক। তা হলে বাংলার স্কুলে পঠনপাঠনের সমস্যা আপাতত মেটানো যায়। মাসখানেক আগে ফোনে স্মৃতিকে এই মর্মে আবেদন জানান মমতা। সোমবারও ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। তখন একই আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে চিঠি লিখে ফের প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি চান তিনি।
নতুন ব্যবস্থায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রের এই নিয়ম অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ মার্চের পরে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আর স্কুলে নিয়োগ করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে গত বছর ২৯ মার্চ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং ৩০ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের জেরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা আটকে যায়। আর ভোটের সঙ্গে সঙ্গে আদালতের স্থগিতাদেশের জেরে আটকে যায় এসএসসি-র নিয়োগ পরীক্ষা। তার পরে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের সময়সীমায় আর ছাড় না-মেলায় এখনও পর্যন্ত ওই পরীক্ষাগুলি হয়নি। ফলে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকে প্রচুর শিক্ষক-পদ খালি থেকে গিয়েছে।
এই অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা দফতরের কর্তারা তো দফায় দফায় দিল্লিতে দরবার করছেনই। এমনকী রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের সময়সীমায় আরও কিছুটা ছাড় দেওয়ার জন্য দিল্লির কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রের কাছ থেকে সদর্থক সাড়া মেলেনি। তার পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী টেলিফোনে আবেদন জানান স্মৃতিকে। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর ইতিবাচক বার্তা আসেনি।
এ বার তাই লিখিত দরখাস্ত পেশ করলেন মমতা। এ দিন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে পরিসংখ্যান দিয়ে মমতা লিখেছেন, এক লক্ষ ২০ হাজার প্রশিক্ষিত প্রার্থী হলে রাজ্যে শিক্ষকের সঙ্কট মিটবে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থী নেই। অন্য অনেক রাজ্যকে তো প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকেও সেই ছাড়টুকু দেওয়া হোক।
স্কুলের পার্শ্বশিক্ষক, মাধ্যমিক ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন মমতা। এ দিন টেলিফোনে এই বিষয়েও স্মৃতির সঙ্গে সবিস্তার কথা হয় মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা লিখেছেন, দূরশিক্ষার মাধ্যমে পার্শ্বশিক্ষক ও মাধ্যমিক এবং শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (পোশাকি নাম ডিএলএড) দিতে চায় রাজ্য। এ ব্যাপারে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-এর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এনসিটিই-র অনুমোদন মেলেনি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাতে হস্তক্ষেপ করেন এবং দ্রুত ওই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করা যায়, সেই আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চলতি মাসেই দিল্লি গিয়ে ওই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম নিয়ে এনসিটিই-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও স্কুলশিক্ষা দফতরের কয়েক জন কর্তা। সেই বৈঠকে এনসিটিই-র কর্তাদের কাছ থেকে সদর্থক প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গিয়েছিল বলে মানিকবাবুর দাবি।