সভামঞ্চের প্রস্তুতি। ছবি: দীপঙ্কর দে।
চাষের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আট বছর আগে তিনি এখানে এসে মঞ্চ বেঁধে অনশন শুরু করেছিলেন। তখন তিনি বিরোধী নেত্রী। কালঘাম ছুটেছিল প্রশাসনের।
আগামী বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের সিঙ্গুরে আসছেন। এ বার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলীয়ান হয়ে ‘সিঙ্গুর উৎসব’ পালন করতে। এ বারও কালঘাম ছুটছে প্রশাসনের। কারণ, শুধু তো উৎসব নয়, একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। প্রকাশ্য সমাবেশও হবে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের প্রথামাফিক সুযোগ-সুবিধাও বিলি করবেন মমতা। সর্বোপরি রয়েছে অনিচ্ছুকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলি। তাই এ বারের ভিড় যে সে বারের ভিড়কে কয়েক গুণ ছাপিয়ে যাবে, তা নিয়ে প্রশাসন নিশ্চিত।
সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমি ফেরত এবং ‘অনিচ্ছুক’দের ক্ষতিপূরণ দেওয়ায় প্রক্রিয়া চলছেই। তার মধ্যেই জোরকদমে চলছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া সানাপাড়ায় মমতার প্রকাশ্য সমাবেশের জন্য ৮০ ফুটেরও বেশি লম্বা মঞ্চ বাঁধার কাজ। যেখানে অন্তত ৩০০ জন একসঙ্গে বসতে পারেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই উৎসবের অন্য তাৎপর্য রয়েছে। শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না। জমি-আন্দোলনের স্মৃতিচারণা হবে। আন্দোলনে জড়িতদেরও মঞ্চে ডাকা হবে। অনিচ্ছুকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলিরও সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এ পর্যন্ত ৩০০ জন আবেদনপত্র
জমা দিয়েছেন।’’
আট বছর আগে বিরোধী নেত্রী হিসেবে সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মঞ্চ বেঁধে অনশন শুরু করেছিলেন মমতা। তার জেরে সাত দিন অবরুদ্ধ হয়ে ছিল দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’টি ‘লেন’ই। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তৎকালীন মুখ্যসচিব অশোকমোহন চক্রবর্তী নিজে সিঙ্গুরে এসে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কথা বলা হয় আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও। তারপর একটি ‘লেন’ খুলে দেওয়া হয় গাড়ি চলাচলের জন্য।
এ বার ওই সমাবেশের জন্য এক দিনেই কী পরিস্থিতি হয়, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে, প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী ‘লেন’টি গাড়ি চলাচলের জন্য খোলা রাখা হবে। কিন্তু প্রশাসনেরই একাংশের ধারণা, যে পরিমাণ ভিড় হবে, তাতে কোনও ‘লেন’ দিয়েই গাড়ি চলাচলের পরিস্থিতি থাকবে না।
এ নিয়ে জেলাশাসক সঞ্জন বনশল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও সমাবেশের জন্য কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি। এ সংক্রান্ত আবেদন এলে তা দিল্লিতে সংস্থার সদর দফতরে পাঠানো হবে। সেখানকার কর্তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
মমতার সমাবেশ ঘিরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন। তাঁদেরই এক জন জানান, মুখ্যমন্ত্রী সে দিন প্রশাসনিক বৈঠক করবেন সিঙ্গুর ব্লক অফিসে। তার পরে সানাপাড়ার মঞ্চে সমাবেশ এবং উৎসব। তিনি বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী থেকে গীতাঞ্জলি প্রকল্প, সাইকেল বিলি থেকে গতিধারা— সব ধরনের সরকারি প্রকল্পের সুবিধাই মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে বিলি করবেন। অন্য কোনও বার্তাও দিতে পারেন।’’
এই প্রবল তোড়জো়ড়ের মধ্যে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন জমি ফেরানোর প্রক্রিয়ার জন্য অন্য জেলা থেকে আসা ভূমি দফতরের কর্মীদের একাংশ। কারণ, বৃষ্টির জন্য আগাছা পরিষ্কারের কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তাতে মাপজোকের জন্য আগাছাহীন পরিষ্কার জমি ঠিকমতো পাচ্ছেন না তাঁরা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, লোডশেডিং সমস্যা দেখা দেওয়ায় খাসেরভেড়ির বিদ্যুতের সাব-স্টেশনটি এখনই সরানো হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থা করেই সেটি সরানো হবে।