কারখানা না হলে ব্যবস্থা, জিন্দলকে হুঁশিয়ারি মমতার

শালবনিতে জিন্দলরা অবিলম্বে তাদের প্রস্তাবিত ইস্পাত এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি না-করলে ওই প্রকল্পের জন্য দেওয়া জমি ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালে ওই প্রকল্পের জন্য জমি বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। ক’দিন আগেই বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে আবাসন-প্রকল্প হবে বলে জনসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালবনি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫২
Share:

শালবনিতে জিন্দলরা অবিলম্বে তাদের প্রস্তাবিত ইস্পাত এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি না-করলে ওই প্রকল্পের জন্য দেওয়া জমি ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালে ওই প্রকল্পের জন্য জমি বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। ক’দিন আগেই বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের জন্য নেওয়া জমিতে আবাসন-প্রকল্প হবে বলে জনসভায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়ে সরাসরি জিন্দলদের নাম করে তিনি বলেন, শিল্পের জন্য নেওয়া জমি ফেলে ফেলে রাখলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। যত দিন না কারখানা হবে, জমিদাতারা চাকরি পাবেন, তত দিন তাঁদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

সোমবার শালবনির গোদাপিয়াশালে নতুন এক সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন মমতা। তার পরেই ছিল প্রশাসনিক জনসভা। জিন্দলদের প্রকল্প-এলাকা থেকে বড়-জোর পাঁচ কিলোমিটার দূরে জনসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “জিন্দলদের কারখানা এখনও হয়নি। প্রায় চার হাজার একর জমি নিয়ে রেখেছেন, শিল্প করবেন বলে। আমরা তাঁদের বলেছি, দ্রুত কাজ করতে হবে। না হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

এর আগে সিঙ্গুরে টাটাদের কাছ থেকে জমি ফিরিয়ে নিয়ে ৬০০ একরে অন্য শিল্প গড়ার কথা বলেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই জমি আপাতত আইনি জটে বন্দি। তার পর বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের জন্য নেওয়া জমির অর্ধেকটাতেই আবাসন-প্রকল্প হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। যা নিয়ে নানা স্তরে প্রচুর সমালোচনাও হয়। অনেকেই বলেন, শিল্পের জমিতে আবাসন গড়ার কথা বলে এ রাজ্যে শিল্পের সম্ভাব্য অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীই। এ দিন জিন্দলদের প্রতি হুঁশিয়ারি মমতার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলের’ চেষ্টা কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

শালবনিতেই শিলান্যাসের ছ’বছর পরেও পরিকাঠামো নির্মাণের স্তরেই থমকে রয়েছে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনায় স্বপ্ন দেখানো জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্প। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “যদি দ্রুত শিল্প করা না হয়, তা হলে আমরা অন্য শিল্প করবো। জমি ফেলে রাখব না। চার হাজার একর জমিতে অনেক বড় শিল্প হতে পারে। হাজার-হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি হতে পারে।”

ঘটনা হল, সম্প্রতি দ্রুত জিন্দলদের কারখানা চালু ও জমিদাতা পরিবারের কাজের দাবিতে প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রহৃত হয়েছেন নির্মীয়মাণ কারখানার এক কর্মী। যে কারখানা নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তোপ দেগেছেন, কেন এগোচ্ছে না তার কাজ?

জিন্দল গোষ্ঠীর দাবি, গোড়ায় ছিল মাওবাদী-সমস্যা। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর প্রকল্পের শিলান্যাস সেরে ফেরার পথে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয় লক্ষ করে মাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। তার জেরে কাজে ভাটা পড়ে। ২০০৯ সালে মন্দা ও ইস্পাতের পড়তি চাহিদার কারণে প্রকল্পের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী কালে ছিল জমি-জট। সে সমস্যা কাটলেও এখন সঙ্কট কাঁচামাল নিয়ে।

জিন্দলদের বক্তব্য, আকরিক লৌহের নিশ্চিত জোগান ছাড়া ইস্পাত প্রকল্প শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ, আকরিক লৌহ সরবরাহের নিশ্চিত উৎস না থাকলে ব্যাঙ্ক ঋণ মিলবে না। সম্পূর্ণ নতুন ইস্পাত প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার বা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে আকরিক লৌহ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে ঋণ দেবে না ব্যাঙ্ক। শালবনির ইস্পাত প্রকল্প গড়তে প্রথম ধাপে চাই ২০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থা সূত্রের খবর, এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে ইস্পাত কারখানা শুরু না হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করা যেত। শালবনির ইস্পাত প্রকল্পের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। জিন্দলদের দাবি, রাজ্য সরকারের ছাড়পত্রের জন্যই আটকে রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার প্রক্রিয়া। তার মধ্যেই রাজ্য সরকার সম্প্রতি জিন্দলদের সঙ্গে তাদের পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট’ বা পিপিএ বাতিলের চিঠি পাঠিয়েছে। সংস্থার বক্তব্য, এমনিতেই আর্থিক এবং অন্যান্য নানা সমস্যায় আটকে রয়েছে কারখানার কাজ। তার মধ্যে পিপিএ বতিল হলে সংস্থাটির পক্ষে ব্যাঙ্কঋণ ও কয়লা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এই পরিস্থিতিতে এ দিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর মাধ্যমে তিনি জেনেছেন, কারখানার জন্য জমিদাতা চারশো পরিবার এখনও অর্ধেক টাকা পাননি। সভায় মমতার দাবি, “যতক্ষণ না কারখানা হবে, লোকে চাকরি পাবে, তত দিন ওই চারশো পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে।” সভাস্থলে জমায়েতের মধ্যে এমন কোনও জমিদাতা আছেন কিনা, জানতেও চান মুখ্যমন্ত্রী। তবে কেউ সাড়া দেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement