নোট বাতিলের পরে দিল্লিতে গিয়ে যা করেছিলেন, এ বার বিধানসভায় দাঁড়িয়েও সেই অবস্থান বজায় রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘জনবিরোধী’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যে তাঁর প্রতিপক্ষ শিবিরকেও ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে আহ্বান জানালেন তিনি।
রাজনীতির ফারাক রেখে বিরোধীরা তৃণমূল নেত্রীর এই আবেদনে শেষ পর্যন্ত সাড়া দিচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু সাধারণ মানুষের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে রাজনৈতিক সহমত তৈরির চেষ্টা বিধানসভাতেও নথিভুক্ত করে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বিধানসভার আলোচনায় কংগ্রেসের বক্তা-তালিকায় সরকার পক্ষই দলত্যাগী মানস ভুঁইয়ার নাম রাখায় মমতার প্রচেষ্টা শুরুতেই খানিকটা হোঁচট খেয়েছে। আর বামেরা তৃণমূল নেত্রীর হাত ধরতে চায়নি সারদা-নারদের রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এনে।
জাতীয় স্তরে মোদী-বিরোধী জোট গড়ার জন্য সব দলের কাছেই আর্জি জানিয়েছিলেন মমতা। কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী থেকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি— কারও সঙ্গেই কথা বলতে বাকি রাখেননি। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতে সোমবার নোট বাতিল নিয়ে ১৬৯ ধারায় সরকারি প্রস্তাবের উপরে আলোচনায় যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের রাজ্যের ক্ষেত্রে বিজয়ীসুলভ উদারতা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কয়েক মাস আগের বিধানসভা ভোট এবং সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বুঝিয়েছেন, মানুষের রায় তৃণমূলেরই পক্ষে গিয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর ডেকে-আনা ‘ম্যানমেড বিপর্যয়ে’র প্রতিবাদের সময় বৃহত্তর ঐক্য দরকার। মমতার কথায়, ‘‘আমরা যদি রাজনৈতিক পার্থক্য সরিয়ে বারংবার আপনাদের কাছে আবেদন জানাতে পারি, আপনাদের অসুবিধা কী?’’
দুই বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট অবশ্য তাদের অসুবিধার কথা এ দিনই জানিয়ে দিয়েছে। যদিও মমতা বিধানসভায় তাঁর ভাষণেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সবর্ভারতীয় স্তরের বিরোধী নেতারা এক সুরে প্রতিবাদ করছেন। অথচ রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন ছোটখাটো বিষয়কে মাঝখানে টেনে আনা হচ্ছে? এমনকী, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর উদ্দেশে মমতা এ দিন বলেছেন, ‘‘আপনারা চাইলে আমরা একটা মিছিলও করে দিতে পারি!’’ ঠিক যে ভাবে ইউপিএ-২ আমলে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবাদে প্রয়োজনে আলিমুদ্দিনে গিয়ে আলোচনার কথাও বলেছিলেন মমতা।
আলোচনার যে বক্তা-তালিকা এ দিন বিধানসভায় বিলি করা হয়েছিল, সেখানে হঠাৎই দেখা যায় কংগ্রেসের বক্তা হিসাবে মানস ভুঁইয়ার নাম রয়েছে! যিনি এখন তৃণমূলে। তাঁদের সম্মতি ছাড়াই কী ভাবে মানসবাবুর নাম তালিকায় দিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আলোচনা বয়কট করেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীরই হস্তক্ষেপে মানসবাবুকে বলতে দেওয়া হয়নি। তবে তত ক্ষণে কংগ্রেস ক্ষুব্ধ! বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, স্পিকার নিজের এক্তিয়ারের ভুল ব্যাখ্যা করছেন। আলোচনা আজ, মঙ্গলবারও চলার সময়ে মানসবাবুকে বলতে দেওয়া না হলে তবেই তাঁরা তাতে যোগ দেবেন। যদিও মানসবাবুর বক্তব্য, ‘‘মান্নান অকারণে বিরোধিতা করছেন! এটা স্পিকারের এক্তিয়ারভুক্ত।’’ আর বামেদের তরফে সুজনবাবু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘আমরা বরাবরই কালো টাকার বিরুদ্ধে। কিন্তু যাদের গায়ে কালো টাকার ছোপ লেগে আছে, তাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন হয় কখনও?’’