রাজ্যের নাম বদল নিয়ে ঐকমত্য হল না সর্বদল বৈঠকে। এ মাসের গোড়ায় রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গ’ বা ‘বাংলা’ করতে চায় তাঁর সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সর্বদল বৈঠকে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, সরকার চায় রাজ্যের নাম হোক ‘বাংলা’। ইংরেজিতে বলা হবে বেঙ্গল, হিন্দিতে বঙ্গাল। কিন্তু সরকারের সেই প্রস্তাবে ঘুরিয়ে আপত্তি জানায় বাম-কংগ্রেস। প্রস্তাবটি সরাসরি খারিজ করে দেয় বিজেপি।
রাজ্যের নাম পরিবর্তনে উদ্যোগী হয়েই ২৬ অগস্ট থেকে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে সরকার। বিষয়টিতে বিধানসভায় আলোচনা ও ভোটাভুটি হওয়ার কথা ২৯ অগস্ট। শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সেটি অনুমোদিত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় ষোলো আনা। রাজ্যপালের স্বাক্ষরের পরে বিধিসম্মত স্বীকৃতির জন্য কাগজপত্র পাঠানো হবে দিল্লিতে। কিন্তু সরকার চেয়েছিল, তার আগে স্পিকারের মাধ্যমে সর্বদল বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে ঐকমত্য গড়ে তুলতে।
বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই নতুন নাম পছন্দ করেছেন। বিশিষ্ট জনেদের অধিকাংশের মত ছিল, নাম বদলানো হলে ‘বঙ্গ’ রাখাই ভাল। এতে এক দিকে যেমন প্রতিবেশী বাংলাদেশের থেকে রাজ্যের নামটিকে পৃথক রাখা সহজ হবে, তেমনই ‘বঙ্গ’ নামটির প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক পটভূমিকেও মান্যতা দেওয়া যাবে। উদাহরণ হিসাবে তাঁরা ঐতরেয় উপনিষদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ থাকার কথাও বলেছিলেন। বলেছিলেন ‘অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ’র কথা।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টি বিবেচনা করেছেন অন্য ভাবনা থেকে। তিনি মনে করেন, রাজ্যের নাম হিসেবে ‘বাংলা’ শব্দটি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারবে। ‘বঙ্গ’ বলতে আমজনতা যতটা স্বচ্ছন্দ হবে, তার চেয়ে ‘বাংলা’ বলতে তাদের সুবিধা হবে বেশি। মমতার কথায়, ‘‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলা মা ইত্যাদি বলার সময় আবেগ বা অনুভূতির যে সহজ প্রকাশ হয়, অন্য কোনও শব্দে তার কোনও
বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। তাই রাজ্যের নতুন নাম ‘বাংলা’ রাখাই ভাল।’’
অতীতে রাজ্যের নাম পরিবর্তন করার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন বামেরাই। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার ব্যাপারে প্রস্তাব পাশ করেছিল বিধানসভা। এ দিন সর্বদল বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, তখন কেন বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল? তা ছাড়া বর্ণানুক্রমে রাজ্যের নাম এগিয়ে আনার জন্য প্রথম তৃণমূল জমানায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তারই বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হল না কেন? তাই
হুজুগ ছেড়ে বিষয়টি সব দিক থেকে ভাল মতো বিচার করাই বাঞ্ছনীয়। সরকার তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশিষ্ট জন থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলুক। তার পরে সিদ্ধান্ত নিক।
অন্য দিকে কংগ্রেসের প্রস্তাব, রাজ্যের নাম পরিবর্তন নিয়ে সবিস্তার আলোচনার স্বার্থে একটি কমিশন গঠন করা হোক। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বৈঠকে বলেন, একমাত্র কোনও কমিশনের পক্ষেই রাজ্যের সব স্তরের ও সমাজের সব অংশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিরপেক্ষ সুপারিশ করা সম্ভব।
বিজেপি অবশ্য কোনও টালবাহানার পথে হাঁটেনি। তাদের রাজনৈতিক লাইন পরিষ্কার, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি বদল করলে দেশভাগের ইতিহাসকে অস্বীকার করা হবে। তাই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, বিধানসভার ভিতরে শুধু নয়, বাইরেও তাঁরা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করবেন।
এতে অবশ্য সরকারের হেলদোল নেই। কারণ তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বিধানসভায় এই প্রস্তাব আরামে পাশ করিয়ে ফেলবে সরকার। ‘বাংলা’ নামটির সঙ্গে রাজ্যের বহু মানুষের আবেগ রয়েছে। বাম-কংগ্রেস-বিজেপি বিরোধিতা করলে আখেরে ক্ষতি হবে তাঁদেরই।