সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী।
সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করেছে ৩১ অগস্ট। সিঙ্গুরের চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে সময় দিয়েছে ১২ সপ্তাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশ্য দু’সপ্তাহের মধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিচ্ছে। কাল, বুধবার ‘সিঙ্গুর উৎসব’-এর মঞ্চ থেকে চাষিদের হাতে জমির নতুন পরচা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে চেক তুলে দেবেন সেই সব অনিচ্ছুক জমিমালিকদের হাতে, জোর করে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে যাঁরা এত দিন চেক নেননি।
জমি ফেরানোর প্রস্তুতির কাজ খতিয়ে দেখতে সোমবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মমতা। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের মধ্যে মোট ৯৯৭ একর জমির মধ্যে ৬২০ একরের সমীক্ষা ও চিহ্নিতকরণের কাজ হয়ে যাবে। ৮০০ চেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। ৯১১৭টি পরচা তৈরির কাজ চলছে। বুধবারের আগে তা-ও শেষ হয়ে যাবে।’’
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে সব চেক বা পরচা বিলি করবেন না। প্রতীকী হিসেবে কাজটা তিনিই শুরু করবেন। বাকিদের চেক ও পরচা দেবেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। এ দিন মমতাও বলেছেন, ‘‘প্রয়োজনে ফ্লাড লাইট জ্বেলে চেক বিলি হবে। আমি চলে আসার পরে অন্য মন্ত্রীরা থেকে যাবেন। তাঁরাই সব দেখে নেবেন।’’
কথা ছিল, ওই দিনই উৎসব শুরুর আগে সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে জেলা প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সময়াভাবে তা হচ্ছে না। স্থগিত রাখা হয়েছে সামাজিক পরিষেবা প্রদান ও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনও। মমতা জানান, প্রশাসনিক বৈঠক ও অনুষ্ঠান হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৬-এ জমি অধিগ্রহণ শুরুর আগের পরচাকেই চেক বিলি ও জমি ফেরতের অন্যতম মাপকাঠি ধরা হয়েছে। গোড়ায় অনিচ্ছুকদের নথিপত্র, যেমন পরচা, দলিল ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ৯০০-এর কিছু বেশি অনিচ্ছুক চাষি ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন। ব্লক অফিসে তাঁদের কাছ থেকে নথি জমা নেওয়ার কাজ চলছে। প্রশাসন জানিয়েছে, অনিচ্ছুকদের কাগজপত্র জমা নেওয়ার পরে ইচ্ছুকদের জমি ফেরানোর প্রক্রিয়ায় হাত দেওয়া হবে। ফলে বুধবার চেকের পাশাপাশি মূলত অনিচ্ছুকদের হাতেই জমির পরচা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাস্তবে জমির দখল দিতে অবশ্য আরও কিছু সময় লাগবে বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।
চেক হাতে পেয়ে গেলেও সরকার এখনই সিঙ্গুরের মানুষের জন্য দু’টাকা কেজির চাল ও নগদ দু’হাজার টাকা দেওয়া বন্ধ করছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নভেম্বর পর্যন্ত চাষিদের চাল-টাকা দেওয়া হবে। আশা করি ওই সময়ের মধ্যে চাষ শুরু করে ওঁরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। চাষিরা যাতে দ্রুত চার-পাঁচ রকম ফসল চাষ শুরু করতে পারেন, তার জন্য সার-বীজ বা এ রকম কিছু প্যাকেজ দেওয়া হবে।’’
ন্যানো কারখানার মূল শেডটির কী হবে, সে প্রশ্ন এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে ওঠে। মমতা বলেন, ‘‘ভিতরে গুটি কয়েক অস্থায়ী দেওয়াল ও কিছু জিনিসপত্র আছে। সেগুলো যাদের, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আমরা ভেবেছিলাম, ওঁরা নিজেরাই নিয়ে যাবেন। সরকার আরও দু’এক দিন দেখবে। অমিতদাকে (অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র) বলব আরও এক বার অনুরোধ করতে।’’ সরকারের অনুরোধ যদি সংশ্লিষ্ট মালিকরা না শোনেন, তা হলে প্রশাসনই উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যের জিনিস আমরা নেব না। ওঁরা (মালিকেরা) যদি কথা না শোনেন, তা হলে সরকারই সেগুলো সরিয়ে জেলাশাসকের জিম্মায় রেখে দেবে।’’
তা হলে সিঙ্গুরে কি চাষই হবে, কারখানা হবে না? সরাসরি জবাব এড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় হুবহু পালন করব। জমি ফেরত পাওয়ার পরে কে কী করবে, সেটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার।’’
মমতা জানান, কারখানা এলাকায় ৫৬ একরে ছোটখাটো নির্মাণ আছে। ৮০ একরে রাস্তা এবং ৩৮ একরে নয়ানজুলি রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সে সব চাষযোগ্য করে ফেলা হবে। কারখানা চত্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দু’টো সাব-স্টেশন। সেগুলি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের ১২ একর জমিও ওখানে আছে। ওই জমি ঘিরে দেওয়া হবে। সব কিছু ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখা হবে। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই দু’সপ্তাহে রাজ্য কী কী পদক্ষেপ করল, তা-ও সর্ব্বোচ্চ আদালতকে জানাবে রাজ্য। মমতা বলেন, ‘‘আদালত চায়নি। কিন্তু কোর্টের রায়কে আমরা কতটা সম্মান করছি, সেটা বোঝাতেই এই পদক্ষেপ।’’