মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে বৃষ্টি মাথায় নিয়েও উপচে পড়ছে ভিড়। বর্ধমান শহরের জিটি রোডে উদিত সিংহের তোলা ছবি।
ফি বছর সেচখালের জল না পেয়ে বিক্ষোভ, হাহাকার দক্ষিণবঙ্গের চেনা ছবি। সেচখাল মজে যাওয়া, দেখভালের অভাবের অভিযোগ চেনা। এ বার সেই সমস্যা মেটাতে ডিভিসির সেচখাল সংস্কারে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে তিনি বলেন, ‘‘বর্ধমান-সহ চার জেলা সেচের জন্য ডিভিসি-র উপর নির্ভরশীল। অথচ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ সেচখালগুলি পরিষ্কার করে না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বন্যা হয়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় রাজ্য সরকার একটা প্রকল্প নিয়েছে। ২৮০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খরিফ বা বোরো মরসুমে চাষের জল না পেয়ে বারবার বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। গত বোরো মরসুমে ডিভিসি জল দিতে না পারার কথাও জানিয়ে দেয়। জলের অভাব দেখা যায় বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়ডা, হুগলিতে। সেচ দফতরের একাধিক রিপোর্টে দেখা যায় কোথাও সেচখাল মজে গিয়েছে, কোথাও সেচখালের নিকাশি বেহাল। আবার যেখানে মূল সেচখাল থেকে ছোট ছোট সেচখালের মাধ্যমে জল দেওয়া হয়, সেখানেও জল নিয়ন্ত্রক গেটগুলি ঠিক না থাকায় জল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। আবার দীর্ঘদিন খাল সংস্কার না হওয়ায় অনেক সময় জল ছাড়লেও নিচু জমিতে তা পৌঁছয় না। জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজে বিভিন্ন পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি সেচ খাল সংস্কার করলেও, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সংস্কার হওয়ায় অনেক সময় জল মাঝপথে আটকে যায়। জমি পর্যন্ত পৌঁছয় না। তাতে অল্প বৃষ্টিতেই সেচ খাল উপচে পড়ে মাঠঘাট ভাসিয়ে দেয়। সেচখালের দু’ধারে থাকা বিঘের পর বিঘে জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হয়। তবে এ বার সেচখালগুলি সংস্কার হলে তা বন্যা নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা নেবে বলেও জানান সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্ষায় ভরা ডিভিসির সেচখাল।
কাঞ্চননগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে কী কী কাজ হবে?
সেচ দফতর ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেচখালগুলি সংস্কার তো করা হবেই। এর পাশাপাশি মূল সেচ খাল থেকে ছোট ছোট খালে বিভক্ত হয়ে জল যায়। এর জন্য মূল সেচখালের উপর ‘রেগুলেটেড গেট’ থাকে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ওই সব গেটের বেহাল অবস্থা। বেশ কিছু জায়গায় গেট ভেঙে গিয়েছে নয়তো যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে, সেই সব গেট সংস্কার করা হবে। আবার ছোট ছোট সেচ খাল থেকে নিকাশি পদ্ধতিতে খেত জমিতে জল পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে হাওড়া, বাঁকুড়া জেলায়। সেই সব নিকাশি ব্যবস্থাও বেশ খারাপ। ফলে জল শেষ জমি পর্যন্ত যায় না। ওই সব নিকাশিগুলি নতুন করে তৈরি হবে বলে প্রকল্পে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু কালভার্ট ও সেতুর সংস্কারও প্রস্তাব রয়েছে ওই প্রকল্পে। সেচ দফতরের এক শীর্ষ স্থানীয় কর্তার কথায়, “মোট ৫৩০০ কিলোমিটার সেচখাল সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেচখাল সংস্কারের পাশাপাশি ওই প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে সেচখাল তৈরিও করা হবে।”