সিঙ্গুরে সময় বেঁধে দিলেন মমতা

জমি চাষযোগ্য করতে বরাদ্দ ২০ দিন

রায় বেরনোর পরে এক মাস পার। এখনও সিঙ্গুরের জমিতে ফের চাষ করতে নামতে পারলেন না চাষিরা। প্রশাসনের কর্তারাও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, ঠিক কবে তা সম্ভব হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সময় দিতে রাজি নন।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

সিঙ্গুরে ভাঙা হচ্ছে শেড। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

রায় বেরনোর পরে এক মাস পার। এখনও সিঙ্গুরের জমিতে ফের চাষ করতে নামতে পারলেন না চাষিরা। প্রশাসনের কর্তারাও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, ঠিক কবে তা সম্ভব হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সময় দিতে রাজি নন। উল্টে কাজ শেষ করার জন্য প্রশাসনকে তিনি সময় বেঁধে দিলেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সাফ নির্দেশ দিয়েছেন, কারখানা হওয়ার আগে ওই সব জমি যে চেহারায় ছিল, আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যাতে ২১ অক্টোবর, অর্থাৎ কালীপুজোর আগেই চাষিরা নিজের জমিতে নামার অধিকার পান। এ দিনের বৈঠকে সিঙ্গুর প্রসঙ্গ উঠতেই হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল জমিকে পূর্বাবস্থায় ফেরাতে আরও এক মাস সময় চেয়ে বসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাতেই বেজায় চটে যান। তিনি বলেন, “অনেক হয়েছে। আর নয়। আপনাদের প্রচুর সময় দিয়েছি। না পারলে বলে দিন।”

মুখ্যমন্ত্রীকে মুখের উপর কিছু বলার সাহস স্বভাবতই কেউ দেখাননি। যার মানে, হাতে আর গোনাগুন্‌তি কুড়ি দিন। এমতাবস্থায় মহা আতান্তরে পড়েছেন কর্তারা। অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, কুড়ি দিনে বাকি কাজ শেষ করা কার্যত অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সামনে মূল সমস্যা তিনটি। কী রকম?

Advertisement

প্রথমত, টাটা কারখানার সাড়ে ১৩ লক্ষ বর্গফুট শেড ভাঙতে হবে। শেডের নীচে রয়েছে সাত-আট ফুটের কংক্রিট। যা তুলে ফেলে সেখানে মাটি বোঝাই করতে হবে। কারখানা চত্বরের ভিতরে পাঁচটা যে পিচ-রাস্তা, (দৈর্ঘ্য ২০ কিমি), তারও চিহ্ন মুছতে হবে। পাশাপাশি ৩৮ একরের জলাভূমি বুজিয়ে জমিতে পরিণত করতে হবে।

দ্বিতীয় বড় কাজ— সব অনিচ্ছুক চাষির হাতে ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছে দেওয়া। সব মিলিয়ে ২৫২২ জন অনিচ্ছুকের হাতে ২৯৫ একর জমি ছিল। এখনও ১২০০ জনকে সরকার চেক দিতে পেরেছে, যাঁদের অধীনে মোট জমি ৬০-৬৫ একরের বেশি নয়। অন্য দিকে যত আবেদন জমা পড়েছে, তাতে আরও ১২৬ একর জমির মালিকদের চেক দেওয়া যাবে। বাকি অনিচ্ছুকদের কী ভাবে খুঁজে বার করা যাবে, সরকারি কর্তারা ভেবে পাচ্ছেন না।।

এ ছাড়া ইচ্ছুক চাষিদের পরচা বিলি নিয়েও ঘোরতর জটিলতা। ২০০৬-এ অধিগ্রহণের সময় ১০ হাজার ৩৫২ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। গত এক মাসে মেরে-কেটে সাত হাজারকে পরচা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও পরচা নিতে লোক আসছে না। ‘‘ওঁদের খুঁজে খুঁজে বার করাটা গন্ধমাদনে বিশল্যকরণী খোঁজার মতো। কুড়ি দিনে তা কতটা হবে?’’— প্রশ্ন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের।

কিন্তু মাথার উপরে যে ‘ডেটলাইন’ ঝুলছে! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া! পরিস্থিতি বুঝে রীতিমতো প্রমাদ গুনছেন তৃণমূলস্তরের অফিসারেরা। ২১ অক্টোবর চাষিদের হাতে জমি তুলে দেওয়া যাবে কি?

‘‘আলবাৎ যাবে।’’— প্রত্যয়ী জবাব শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। রাজ্য সরকারের তরফে তিনিই সিঙ্গুরপর্বের দেখভাল করছেন। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘বন্যা-খরার সময়ে প্রশাসন যে ভাবে কাজ করে, পুজোর সময়েও সিঙ্গুরে সে ভাবে কাজ হবে। ২১ অক্টোবর থেকেই চাষিদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হবে।’’

এবং সেই তাগিদেই ন্যানো কারখানার শেড ভাঙার কাজে পূর্ত দফতর ও কলকাতা পুরসভার পাশাপাশি এ বার এইচআরবিসি’কেও লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে এই মর্মে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন।

ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক

২৫২২ জন অনিচ্ছুকের জমি ছিল ২৯৫ একর।

এখন পর্যন্ত ১২৬ একরের চেক তৈরি।

১০ হাজার ৩৫২ জন ইচ্ছুক ৭০২ একরের ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন।

এখন ৭০০০ জন পরচা নিয়েছেন। ৩০০ একরের পরচা বিলি হয়নি।

টাটার শেড ভাঙার কাজে ৩০% অগ্রগতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement