দলবেঁধে: টিয়াবনে মুখ্যমন্ত্রীর সভাসস্থলের পথে। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ
সময়ের আগেই কাজ শেষ করে দিন, জেলাশাসক থেকে জনপ্রতিনিধি সকলের জন্য বুধবারের সভা থেকে এমনটাই বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনকী দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “লড়তে পারলে লডুন, না হলে দড়ি-কলসি নিয়ে নিয়ে গঙ্গায় নেমে পড়ুন। এর বেশি কিছু বলব না।”
লোকসভা ভোটের বাকি আর মাস কয়েক। তার আগে বিরোধীদের যে সামান্য পরিমাণ জমিও ছেড়ে দেবেন না তাও এ দিন বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। দলের জনপ্রতিনিধিদের তাঁর বার্তা, ‘‘মানুষের কাছে যান। মানুষকে যেন জনপ্রতিনিধিদের খুঁজতে না হয়।’’ কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর বরাদ্দ ও সবুজসাথীর সাইকেল কোনও ভাবেই আটকে রাখা যাবে না বলে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। জেলার বিডিও এবং মহকুমাশাসকদের নিজের এলাকায় একদিন করে গিয়ে মানুষের সমস্যার কথা শোনারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দলের বিধায়কদের নাম ধরে ধরে এলাকায় বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রামারিকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেন, ‘‘উইলসন নিজের এলাকায় যাও। সময় দাও।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর কালচিনির বিধায়ককে এলাকায় দেখা যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সে খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানেও যে পৌঁছেছে তা এ দিনের নির্দেশেই বোঝা গিয়েছে বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি। বৈঠকে থাকা জলপাইগুড়ির এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘আমরা কে কী করছি এবং কে কী করছি না, তার সবই যে নেত্রী জানেন তা আবার বুঝলাম।’’ বুধবার সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সরকারি নানা প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী হিসেবে বিজেপিকেই যে দেখছেন তাও বুঝিয়েছেন।
এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আধঘণ্টা আগেই তিনি সভাস্থলে চলে আসেন। চালসা এবং গরুমারা জঙ্গলের মাঝামাঝি টিয়াবনের সভায় সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে। দুপুরের পর ভিড় উপচে পড়ে। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ দর্শকদের মাঝে থাকা ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে। হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। বিপদের আশঙ্কায় মঞ্চে এসে মাইক হাতে নেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর অনুরোধে ভিড়ের হুড়োহুড়ি কিছুটা কমে। মঞ্চ থেকে ভিড়ের ছবি তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠান। বেশিক্ষণ ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয় বলে পুলিশ থেকেও বার্তা পাঠানো হয়।
এ দিন সভার পরে সৌরভবাবু বলেন, “চা বলয়ে বিরোধী কোনও দলের শক্তি বাড়ছে বলে অনেকে জল্পনা করছেন। কিন্তু এ দিনের সভা দেখিয়ে দিল, চা বাগান হোক বা সমতল, ঘাসফুল ছাড়া অন্য কোনও ফুলের অস্তিত্ব নেই।”