কর্মীদের ডিএ-ক্ষতে বাড়তি ছুটির মলম মমতার

বছর ঘুরলেই পুরসভার ভোট। কর্মীদের রসেবশে রাখা দরকার। সরকারি কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা বকেয়া ৪৯ শতাংশ। কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমন করা দরকার। দাওয়াই কী? বাড়তি ছুটি। ২০১৫ সালে সরকারি ছুটির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের খবর, নতুন সরকারের আমলে ইচ্ছেমতো ছুটির সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে বিশেষ বিশেষ দিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সুপ্রকাশ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

বছর ঘুরলেই পুরসভার ভোট। কর্মীদের রসেবশে রাখা দরকার।

Advertisement

সরকারি কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা বকেয়া ৪৯ শতাংশ। কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমন করা দরকার।

দাওয়াই কী?

Advertisement

বাড়তি ছুটি।

২০১৫ সালে সরকারি ছুটির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের খবর, নতুন সরকারের আমলে ইচ্ছেমতো ছুটির সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে বিশেষ বিশেষ দিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর তিথি দেখে ছুটি ঘোষণা করেছে পরিবর্তনের সরকার। মমতার বদান্যতায় পরের দুর্গাপুজোয় টানা ১১ দিন এবং কালীপুজোয় টানা ছ’দিন সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

ক্ষমতায় এসে সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা। সেই প্রতিশ্রুতি এখন বিশ বাঁও জলে। রাজ্যের শিল্পে বন্ধ্যাদশা কাটার লক্ষণ নেই। উল্টে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট-জুলুমবাজির দাপটে বাংলা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেক শিল্প। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরানোর বদলে ফি-বছর ছুটি বাড়িয়ে কর্মীদের মন পাওয়ার চেষ্টা কেন, প্রশ্ন তুলেছে সরকারি কর্মীদেরই বিভিন্ন সংগঠন। অসন্তোষ গোপন করছেন না বিভিন্ন বণিকসভার প্রতিনিধিরাও। দরাজ হাতে ছুটি ঘোষণা নিয়ে বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট অলক রায়ের মন্তব্য, “সরকার নিশ্চয় কর্মসংস্কৃতির কথা মাথায় রেখেই এই ছুটি দিচ্ছে। লম্বা ছুটি কাটিয়ে কর্মীরা নতুন স্ফূর্তিতে আরও বেশি কাজ করবেন এমনটাই হয়তো আশা করছে তারা!”

বাম আমলের শেষ বছর (২০১০)-এ সরকারি ছুটি ছিল ২৭টি। ’১১-য় তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও বছরের মাঝবরাবর ছুটি ঘোষণার সুযোগ পায়নি। তাই ছুটি ছিল ২৭টাই। ’১২-য় প্রথম সুযোগেই একটি ছুটি বাড়ায় সরকার। গত বছর আরও দু’টো ছুটি বাড়িয়ে সংখ্যাটা হয় ৩০। চলতি বছরে তা বেড়ে ৩১ হয়েছে। আগামী বছর আরও এক দিন ছুটি বাড়ানোয় সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ৩২। কর্মী-নেতাদের বক্তব্য, গত নভেম্বরে বকেয়া ডিএ ছিল ৩৮%। বছর ঘোরার আগেই তা বেড়ে হয়েছে ৪৯%। অনেকের মন্তব্য, ‘ছুটি বাড়ছে বকেয়া ডিএ-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে!’

কী ভাবে বাড়ানো হচ্ছে ছুটি?

এ বছর পুজোর শেষে বিসর্জনের দিনও ছুটি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে রেওয়াজ মেনে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন ছুটি থাকত। সরকার ঘোষণা করেছে, তিথি মেনে আগামী বছর প্রতিপদে ভাইফোঁটার দিনও ছুটি থাকবে। যার অর্থ, ১০ নভেম্বর কালীপুজোর দিন থেকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পর্যন্ত চার দিন ছুটি। পরের দু’দিন শনি-রবিবার। তাই কার্যত এক সপ্তাহ (ছ’দিন) সরকারি অফিস বন্ধ। একই ভাবে সামনের বছর দুর্গা আর লক্ষ্মীপুজো মিলিয়ে অফিস বন্ধ থাকবে টানা ১১ দিন।

২০১৫-য় ৫ মার্চ দোলের দিন, বৃহস্পতিবার ছুটি থাকছেই। তার সঙ্গে পরের দিন ‘হোলি’ থাকায় বাড়তি এক দিন ছুটি পাবেন কর্মীরা। পরের দু’দিন শনি ও রবি। টানা চার দিন ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সরস্বতী পুজো পড়েছে রবিবারে। তাই সাকুল্যে ছুটি বৃদ্ধি এক দিন।

শাসক দলের কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন প্রত্যাশিত ভাবেই এই ছুটি-সংস্কৃতিকে সমর্থন জানিয়েছে। সংগঠনের নেতা সৌম্য বিশ্বাস বলেন, “এই ছুটির সঙ্গে কর্মসংস্কৃতির কী সম্পর্ক, সেটাই তো বুঝছি না। এই আমলে কর্মসংস্কৃতি ভাল হয়েছে।”

কিন্তু কর্মসংস্কৃতি নিয়ে মমতার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির। কর্মীরা এত ছুটি চাইছেন না বলে জানান কংগ্রেস সমর্থিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিই। বেশি ছুটি থাকলে অসুবিধেয় পড়েন আমজনতাই। কর্মচারীরা এত ছুটি চান না। সরকার ছুটি দিয়ে নিজেরাই কর্মসংস্কৃতি নষ্ট করছে। অথচ কর্মচারীদের ন্যায্য মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে না।” মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুঘলকিপনার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহ। তিনি বলেন, “পেটের তাগিদে কর্মীরা ধর্মঘট করলে সরকার কর্মসংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বেতন কাটে, চাকরিতে ছেদ পড়ে। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে হলেই ছুটি দিয়ে দেন। রাজ্যে এখন তুঘলকি শাসন চলছে!”

এ-সব করে কোনওই লাভ হবে না বলে মন্তব্য করে বিরোধী শিবিরের এক কর্মী-নেতা বলে দিলেন, “আসলে এই সরকারেরই ছুটির ঘণ্টা বাজার সময় হয়ে এসেছে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement