রাজ্যের এক্তিয়ারে দিল্লি কী ভাবে হস্তক্ষেপ করছে, এত দিন নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সমানে সেই অভিযোগ করে আসছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কল্যাণ প্রকল্পেও বৈষম্য-পক্ষপাতের অভিযোগ তুলল তাঁর সরকার। নবান্নের অভিযোগ, রাজ্যের যে-দু’টি কেন্দ্রে বিজেপি সাংসদ রয়েছেন, শুধু সেখানেই উন্নয়নের কাজ করতে চাইছে মোদী সরকার। এর কারণ জানতে কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রককে চিঠি দিচ্ছে রাজ্য।
ওই মন্ত্রকের একটি নতুন প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা বয়স্কদের নিখরচায় ছড়ি, ওয়াকার, এলবো ক্রাচ, চশমা, হিয়ারিং এড, হুইলচেয়ার, বাঁধানো দাঁতের পাটি ইত্যাদি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের পুরো টাকাই দেবে কেন্দ্র। প্রথম পর্বে প্রতিটি রাজ্যের দু’টি করে জেলাকে বাছা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দার্জিলিং ও আসানসোলে (যা এখনও জেলাই নয়) ওই প্রকল্পের কাজ হবে বলে জানিয়ে ২৭ ডিসেম্বর মুখ্যসচিবকে চিঠি দেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সচিব জি লতাকৃষ্ণা রাও।
দার্জিলিং বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার কেন্দ্র আর আসানসোলের সাংসদ বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়, যিনি রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও। কল্যাণ প্রকল্পেও এ ভাবে কোলে ঝোল টেনে জেলা বাছাই করায় পুরো বিষয়টিতে রাজনীতির ছায়া দেখছেন নবান্ন-কর্তাদের একাংশ। রাজ্যের অন্যান্য জেলাকে বাদ দিয়ে দার্জিলিং-আসানসোলকে বেছে নেওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের বক্তব্য, কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্প কোন কোন জেলায় চালু করা হবে, সেটা বাছাই করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মতামত নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র তা করেনি। বাছাইয়ে বৈষম্যের অভিযোগ জোরদার হচ্ছে আসানসোলের জেলা তকমা না-থাকায়। নবান্নের কর্তাদের বক্তব্য, আসানসোল বলে পশ্চিমবঙ্গে কোনও জেলা তো এখনও নেই। ওই লোকসভা কেন্দ্রটি বর্ধমানের মধ্যে পড়ে। আসানসোলকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়নি। তা সত্ত্বেও আসানসোলকে আলাদা জেলা হিসেবে দেখিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্প শুরু করার কথা বলা হয়েছে। এতেই স্পষ্ট পক্ষপাত দেখছে তৃণমূল সরকার।
নবান্নের এই অভিযোগে অবশ্য কান দিতে চাইছেন না সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কৃষ্ণপাল গুজ্জর। রাজ্যের অভিযোগের পাল্টা হিসেবে তাঁর কটাক্ষ, নিজেদের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার মধ্যে ‘আমরা-ওরা’ করছেন মমতাই। ‘‘এ ভাবে আমরা-ওরা করা অর্থহীন। গোটা দেশই আমাদের দেশ। মমতাদিদি আসানসোল-দার্জিলিংকে বিজেপির এলাকা হিসেবে দেখছেন কেন? গোটা রাজ্যই তো ওঁর। সেখানকার দু’টো জায়গা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেলে দিদির তো খুশি হওয়া উচিত,’’ বলেছেন গুজ্জর।
কিন্তু আসানসোল তো জেলা নয়! বর্ধমান জেলার একটি শহর মাত্র। অথচ ওই প্রকল্প দু’টি গোটা জেলায় চালু করার কথা। এত জেলা থাকতে একটি জেলার বিশেষ একটি শহর বাছা হল কেন? ‘‘আসানসোলকে এখনও জেলা করেনি ঠিকই। তবে কিছু দিনের মধ্যেই ওটা আলাদা জেলা হয়ে যাবে,’’ যুক্তি দেখাচ্ছেন গুজ্জর।
পক্ষপাতের অভিযোগের ব্যাপারে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ মন্তব্য করতে চাননি। তবে মুখ খুলেছেন বাবুল। বৈষম্য নিয়ে মমতার অভিযোগের জবাবে নবান্নের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বাবুল বলেন, ‘‘দার্জিলিং ও আসানসোলের মানুষ বিজেপিকে জিতিয়েছেন বলে তাঁদের উন্নয়ন চান না মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কেন্দ্র কিছু ক্ষেত্রে আসানসোল আর দার্জিলিঙের প্রতি পক্ষপাত করলে ক্ষতি কী?’’
কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কিছু আমলার বক্তব্য, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ (ধর্ষিতাদের এক ছাতার তলায় সব সুযোগ-সুবিধে দেওয়া)-এর মতো কিছু প্রকল্প এ রাজ্যে চালু হবে না বলে জানিয়েছে মমতার সরকার। তাই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য এখন নিজেরাই জায়গা ঠিক করে দিচ্ছে কেন্দ্র।