শিলিগুড়িতে কর্মিসভার মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়। রয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ও। ডান দিকে, দলীয় কর্মিসভায় এলেও বাগডোগরায় তাঁকে স্বাগত জানাতে তোরণ তৈরি করেছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক আর বিমলা অবশ্য জানান, বুধবার জলপাইগুড়ি স্পোর্টস ভিলেজের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর আসার পথে ওই তোরণ করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর পাল্টা চাপ বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমকে একে অপরের দোসর বললেও দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী সকলকে একসঙ্গে নিয়ে ‘জোটবদ্ধ’ হওয়ার ডাক দিলেন মমতা। সেখানে তিনি সরকার বিরোধী জোটকে পিছনে থেকে সমর্থন করার কথাও বলেন। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে দলের কর্মিসভায় দিল্লিতে এমনই গণতান্ত্রিক জোট করার পক্ষে জোর সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী, ১০০ দিনের কাজের মত প্রকল্প কেন্দ্র বন্ধ করে দিলে হাতা, খুন্তি, কড়াই বা হাঁড়ি নিয়ে দিল্লিতে ধর্না দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “দিল্লিতে ছ’মাসে ওঁরা কিছুই করেনি। মুখে মুখে খালি বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে। ঠকানো হচ্ছে মানুষকে। তেল, ডিজেলের দাম আবার বাড়বে বলে সাংসদের কাছে শুনছি। রাজ্যের টাকা কেটে নিয়ে গিয়ে মাছের তেলে মাছ ভাজা চলছে। ১০০ দিনের কাজ, নানা স্বনির্ভর প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে চাইছে। আঁধার কার্ড আঁধারেই রয়ে গিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা দিল্লিতে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছি। সরকার-বিরোধী বিরোধীদের একজোট হতে হবে। শক্তিশালী বিরোধী সংসদ এবং গণতন্ত্রের জন্য খুবই ভাল লক্ষণ। আমরা পিছন থেকে সবসময় সমর্থন করব। কাজের প্রশ্নে কেন্দ্র প্রতিযোগিতা করুক, আমরা রাজি। তা না করে ওঁরা কুত্সা, চরিত্রহনন, অপপ্রচারের রাজনীতি করছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিকল্প জোট করার কথা বলার পরও বিজেপিরও কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি কলকাতায় বিজেপির সভা থেকে দলের সভাপতি অমিত শাহ, রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্য থেকে হঠানোর ডাক দেন। এ দিন শিলিগুড়ির মঞ্চ থেকেই অমিত শাহদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, “কেউ কেউ ভাষণে বড় বড় বলছেন। আমাকে বাংলা ছাড়া করার কথা বলছেন। আরে আমার জন্ম এখানে, মার খেয়েছি এখানে। রোজ জন্মাচ্ছি, রোজ মরছি। আর আমাকে না কি বাংলা ছাড়া করবে। ওঁদের নাম ‘আহা’ রাখা দরকার। ওদের ললিপপ দেওয়া দরকার।”
জলপাইগুড়ি বোমা বিস্ফোরণ, অসমে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “এলাকায় অচেনা লোকজন দেখলে খোঁজখবর নিন। কারও বাড়িতে অতিথিও আসতে পারে। সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দিন। তাতে কাজ না হলে আমাদের দলের নেতৃত্বকে জানান। আর মোবাইল থেকে সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে মা-বোনেরা। অসতর্ক থাকলে মোবাইল থেকে চক্রান্ত হতে পারে।”
এ দিন সভায় ১০০ দিনে কাজে, ক্ষুদ্র শিল্প, খাদ্য, দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাজ্য গোটা দেশে এক নম্বরে বলেও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন। তাঁর কথায়, “পরিবহণও আমরা এখন চার নম্বরে। আগে তো শেষের দিকে পড়ে থাকতাম। এমনকী, গোটা বিশ্বে সবচেয়ে সস্তার খাবার রাজ্যে পাওয়া যায়।” রাতে জলপাইগুড়ি পৌঁছে উত্তরবঙ্গ উত্সব নিয়ে জেলা পুলিশ, প্রশাসনের কর্তা, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এবং জেলা তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নেন মুখ্যমন্ত্রী।