অধীর চৌধুরী, সুজন চক্রবর্তী, আব্দুল মান্নান।
নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে হারবেন বলেই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থেকেও বিধানসভা ভোটে লড়বেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভায় মমতার ঘোষণার এমনই রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের নেতারা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের দাবি, ‘‘ভবানীপুরে হারবেন মমতা। তাই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চাইছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীরও একই অভিমত এবং ব্যাখ্যা। তাঁদেরও বক্তব্য, ‘‘ভবানীপুরে মমতার জনপ্রিয়তা কমছে। সেখানে জিততে পারবেন না জেনেই উনি বিকল্প একটি আসন খুঁজছেন।’’
মান্নানের ব্যাখ্যা, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই একটি জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী নিজের কেন্দ্রকে আর নিরাপদ বলে মনে করছেন না। উনি নিজের জন্য একটি নিরাপদ কেন্দ্র খুঁজছেন। তাই অনেকেই তাঁর হয়ে বিকল্প আসন খুঁজছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন, ভবানীপুরে তাঁর আর জেতার সম্ভাবনা নেই। কারণ তাঁর করা উন্নয়নের জোয়ারে সব ভেসে গিয়েছে। তাই আর ভবানীপুরে দাঁড়ানোর সাহস নেই।’’ মান্নানের আরও বক্তব্য, ‘‘১৪ বছর পর হঠাৎ ওঁর খেয়াল হল, নন্দীগ্রাম যেতে হবে! এতদিন তো নন্দীগ্রামে যাওয়ার কথা মাথায় আসেনি! এখন নন্দীগ্রাম গিয়ে কাব্যিক কথা বলে আবেগ জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। এবার পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে ওঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন, তা তিনি বুঝে গিয়েছেন। কিন্তু সভায় যতই ভিড় করুন, এবার মুখ্যমন্ত্রী হার এড়াতে পারবেন না।’’
অধীরের বক্তব্য, ‘‘উনি ভবানীপুরে হারের আশঙ্কা করছেন বলে আরেকটি বিকল্প খোলা রাখছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, ভবানীপুরে তাঁর জনপ্রিয়তা কমছে। কারণ, ওই বিধানসভা কেন্দ্রে বড় সংখ্যায় অবাঙালি ভোটার রয়েছেন। ফলে উনি জানেন, এ বার আর ভবানীপুর রক্ষা করতে পারবেন না। তাই বিকল্প হিসেবে নন্দীগ্রামের কথা বলছেন।’’ সুজনের বক্তব্যও একই। তবে তিনি পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল-বিজেপি তো একই। একাধারে বিজেমূল। তাই নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর দাঁড়ানোর পিছনে অন্য রাজনৈতিক সমীকরণও থাকতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, উনি বুঝে গিয়েছেন, ভবানীপুরে এ বার আর ওঁর জেতা হবে না।’’ একধাপ এগিয়ে মান্নান বলেছেন, ‘‘নন্দীগ্রামে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন কংগ্রেসের ভুমিকা ছিল। এমনকি, শহিদের মা ফিরোজা বিবি, যিনি বর্তমানে বিধায়ক, তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। কিন্তু তখন মমতা বলেছিলেন, সিঙ্গুর আন্দোলনকে ধামা চাপা দিতে কংগ্রেস নন্দীগ্রামকে হাতিয়ার করছে।’’ নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দু অধিকারীর ভুমিকার কথা উল্লেখ করে মান্নান বলেন, ‘‘শুভেন্দুর যোগ্য নেতৃত্বে সেদিন কংগ্রেসের থেকে আন্দোলন তৃণমূলের হাতে চলে গিয়েছিল। সেই সময় কৃষক ও জমিরক্ষা কমিটি গড়ে আন্দোলন হয়েছিল। আমরাও সেই আন্দোলনে ছিলাম। কিন্তু সেভাবে লোকবল না থাকায় পিছনে ছিলাম।’’
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভবানীপুর ও নন্দীগ্রাম— দু’টি আসন থেকেই দাঁড়াতে পারেন তিনি। সেই প্রসঙ্গে মান্নান বলেন, ‘‘কোনও রাজনীতিকের জন্য একটি আসন বিপজ্জনক হয়ে গেলে তখন তিনি বিকল্প আসন খোঁজেন। ভারতীয় রাজনীতিতে এমনও নজির আছে, একজন পাঁচ জায়গায় দাঁড়িয়ে পাঁচ জায়গাতেই হেরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর মতো ছক কষছেন। মানুষ মানুষের মতো ছক কষে দেবেন।’’ প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালের নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে বাংলা কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়। ১৯৬৭ সালে তমলুক ও আরামবাগ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। দু’টি আসনে জয়ী হওয়ার পর তমলুক আসনটি রেখে আরামবাগ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। সেই সময় প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন অজয়বাবু। ১৯৭১ সালে তমলুক ও বরাহনগর থেকে ফের প্রার্থী হন তিনি। তমলুক আসনে জয়ী হলেও বরাহনগরে সিপিএমের নেতা জ্যোতি বসুর কাছে পরাস্ত হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ভবানীপুর ও নন্দীগ্রাম দুই আসনেই প্রার্থী হলে ১৯৭১ সালের পর ফের একটি নির্বাচনে দু’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাবে কোনও রাজনীতিককে।
আরও পড়ুন:নাম না করলেও অধিকারীদের কড়া কটাক্ষ মমতার ‘নতুন’ নন্দীগ্রামে
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ডেরায় মাস্টারস্ট্রোক, নন্দীগ্রামে মমতা নিজেই ভোটপ্রার্থী