মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের সংসদীয় দলের পরিচালনার ক্ষেত্রে নিঃশব্দে একটি নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক শিবির এবং দলের একাংশ। সেটি হল, দিল্লিতে সংসদে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাপরায়ণতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। আর সে ক্ষেত্রে দলের রাশ যে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকবে, সেটা তাঁর পক্ষ থেকেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সাংসদদের।
বিষয়টি এমন নয় যে, আগে রাশ থাকত অন্য কারও হাতে। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে তৃণমূলের লোকসভা অথবা রাজ্যসভার নেতা বাইরে গিয়ে মমতাকে ফোন করে তাঁর পরামর্শ নিতেন। তবে তা হত বিশেষ কোনও বড় মাপের বিতর্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু তৃণমূল শিবির মনে করছে, সম্প্রতি রাঁচী থেকে ফিরে এ বার খোদ মমতাই কমিটি তৈরি করে নিজে শেষ কথা বলার কথা ঘোষণা করেছেন। তার থেকে স্পষ্ট, এই নিয়ে একটি কড়া বার্তা তিনি দিতে চাইছেন সাংসদদের। যাতে রাজ্য রাজনীতির নেতৃত্ব কার হাতে, তা নিয়ে কোনও ভুল বোঝাবুঝি বা বিভাজন তৈরি না হয়।
কী বলেছেন নেত্রী? তাঁর বক্তব্য, “লোকসভায় যা অবস্থান নেওয়ার, সেটা আমাদের কারও একার বিষয় নয়। এই বিষয়ে অবস্থান নেবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান, আমি।" এর পরই তিনি একটি কমিটির কথা বলেছেন, যেখানে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ, নাদিমুল হক রয়েছেন। এই কমিটি তাঁর সঙ্গে কথা বলবে সংসদীয় কৌশল নিয়ে।
দলীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত শুধু মাত্র রাজ্যে নয় দিল্লির রাজনীতিতেও দলকে পরিচালনা করবেন মমতাই। কে কোন বিষয়ে নোটিস দেবেন, কোন বিষয় আলোচনার জন্য তোলা হবে, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কেমন ভাবে এগোনো হবে, ইন্ডিয়া জোটের তোলা বিভিন্ন বিষয়গুলির মধ্যে কোনটায় তৃণমূলের সায় থাকবে বা থাকবে না— এই সবেতেই তাঁর সিলমোহর থাকবে। বাংলার প্রতি আর্থিক বঞ্চনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সংসদের দু'কক্ষে তোলার নির্দেশও তাঁরই। আপাতত ছ'টি বিষয় তিনি সর্বসম্মতিক্রমে নির্ধারিত করে দিয়েছেন শীতকালীন অধিবেশনের জন্য। তার মধ্যে রয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, কৃষকদের সারের নিরাপত্তা, মণিপুরে হিংসার মতো বিষয়। এর বাইরে শিল্পপতি গৌতম আদানির ঘুষ কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে গলা মেলানো অথবা তাদের করা সংসদীয় প্রতিবাদে সামিল না-হওয়ার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছে তাঁর তরফে। যদি কেউ তার ব্যতিক্রম করেন, সেটাকে দলের সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য করা হবে না। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে এক তৃণমূল সাংসদ আদানি নিয়ে একের পর এক পোস্ট করে গিয়েছেন। ভবিষ্যতেও যদি তা চলতে থাকে, তা হলে তাঁকে দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী হিসাবেই ধরা হবে। দলের প্রতি মমতার আরও একটি নির্দেশ, শৃঙ্খলা মানা সবার জন্যই একই ভাবে প্রযোজ্য। কোনও জেলার নেতা বা উপনেতার জন্যও যেমন, লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদদের জন্যও ঠিক তেমনই।