ফাইল ছবি
দলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব রুখতে নানা মঞ্চেই কড়া বার্তা দিয়ে থাকেন তিনি। এ বার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ওই প্রবণতা বন্ধে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধাননগর ও কসবায় সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব আবার সামনে এসেছে। ওই দুই ঘটনার সূত্র ধরেই তাঁর দুই মন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, নবান্নে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই মন্ত্রী সুজিত বসুর কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে তাঁর এত বিবাদ কীসের? কেন বিধাননগর এলাকায় গোলমাল হচ্ছে? সুজিত মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর সঙ্গে সব্যসাচীর কোনও বিরোধ নেই। দু’টি ক্লাবের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে, তাতে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই। এর পরে কসবার ঘটনায় জাভেদের প্রসঙ্গ সেরে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার ফিরে আসেন বিধাননগরের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে। তখন তাঁর মন্তব্য, ‘মনে রেখো, সব্যসাচী আমার অত্যন্ত প্রিয়’।
সব্যসাচী-সুজিত প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে শাসক দলের অন্দর মহল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে বিধাননগরে সুজিতের কাছে বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছিলেন সব্যসাচী। পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা ছিল মুখ্যমন্ত্রীরই। যা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের একাংশেই উষ্মার সুর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু বিধাননগরে পুরভোটে প্রার্থী-তালিকা ঠিক করার বৈঠকে মমতাই বলেছিলেন, তাঁর একটাই প্রার্থী আছে এবং সেটা সব্যসাচী। এ বার গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গে সুজিতকে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বার্তাকে সেই বৃহত্তর প্রেক্ষিতেই দেখছে শাসক দলের একাংশ।
মন্ত্রী সুজিত মন্ত্রিসভার ভিতরের আলোচনা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। আর সব্যসাচী বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে কী কথা হয়েছে, আমার জানা নেই। না জেনে কোনও মন্তব্য করব না। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সৈনিক। দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শ মেনেই চলব।’’
আর এক মন্ত্রী জাভেদ খানকেও এ দিন তাঁর এলাকা সম্পর্কে কার্যত সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও ধরনের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব তিনি যে পছন্দ করছেন না, তা- জাভেদকেও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই কলকাতা পুরসভার ১০৭ এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে গোলমাল লেগে রয়েছে। গত সপ্তাহেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায়। কেন এমন গোলমালের খবর আসছে, এ দিন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ দেন, সেখানকার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে হবে দ্রুত। কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে মধ্যস্থতার দায়িত্বও মমতা দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
কসবা এলাকার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে জাভেদের তেমন বনিবনা নেই বলে অভিযোগ। এলাকায় অভিযোগ আছে, সিন্ডিকেট নিয়ে জাভেদ-সুশান্ত গোষ্ঠীর মধ্যে নিত্য ঝামেলা লেগেই থাকে। সেই প্রেক্ষিতেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বলে সূত্রের ব্যাখ্যা। যদিও জাভেদ বলেছেন, “দলের কথা বাইরে বলব না।” সুশান্তেরও বক্তব্য, “এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।”