নারদ-নারদটা চলছে বেশ কয়েক দিন ধরেই। রাজ্য সফরে আসা বিজেপি সভাপতির আক্রমণের জবাব দিচ্ছিলেন মমতা-সহ তৃণমূলের তাবড় নেতারা। সেই আক্রমণের রেশ ধরে রেখে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার অনুষ্ঠানে বিজেপিকে রীতিমতো চড়া সুরেই বিঁধলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার দিকে তাকালে তিনিও যে এ বার দিল্লির দিকে পা বাড়াবেন, ফের সেই হুঁশিয়ারি ছুড়ে দিলেন স্পষ্ট ভাষায়। শুধু দিল্লি নয়, নাম না করে গুজরাতে শিশু মৃত্যু, অপুষ্টি নিয়ে এক হাত নিলেন নরেন্দ্র মোদীকেও।
বীরপাড়ায় এ দিন ফালাকাটা হাসপাতাল, বীরপাড়া-হাসিমারা শিল্প হাব, ভুটানের সঙ্গে সড়কপথ সংযোগের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন মঞ্চে দাঁড়িয়েই কার্যত গত কয়েক দিনের অমিত শাহের প্রতিটি আক্রমণের মোকাবিলা করলেন মমতা। এবং আক্রমণাত্মক ঢঙেই। ‘সকালে দলিতের বাড়ি, বিকেলে পাঁচ তারা হোটেল’ বলে বিজেপি সভাপতিকে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েননি তিনি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র আর উন্নয়নই তাস অমিত শাহের
এক দিকে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি, অন্য দিকে চা বাগান সঙ্কট— উত্তরবঙ্গে দাঁড়িয়ে এই বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে থাকল এই দুই বিষয়। হিন্দু, মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তুলে বাংলায় রাজনীতি করা যাবে বলে অমিত শাহদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মমতা। অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে হিংসার বীজ পোঁতা হচ্ছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেন তিনি।
গত বিধানসভা ভোটের আগে বীরপাড়ায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, ডানকান গোষ্ঠীর সাতটি বন্ধ চা বাগান অধিগ্রহণ করবে তাঁর সরকার। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও এসে এই নিয়ে আশ্বাস দেন। তখন অনেক বিজেপি নেতাই দাবি করেন, এ বারে চা বাগানের হাল ফেরাবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন চা বাগান কর্মীদের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। কেন্দ্র আশ্বাস দিলেও কেন এখনও চা বাগান হস্তান্তর হয়নি, কেন চা শ্রমিকদের অবস্থা ফেরেনি, তা নিয়ে মোদী সরকারকে বেঁধেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, বাংলাকে বঞ্চিত করতেই কেন্দ্র টি-বোর্ডের সদর দফতর কলকাতা থেকে অসমে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বাংলায় চা বাগান বেশি ছিল বলেই টি-বোর্ডের অফিস হয়েছিল এখানে। দরকারে হলে অসমে নতুন টি-বোর্ডের অফিস খোলা হোক, দাবি মমতার।
গতকালও আলিপুরদুয়ারের প্রশাসনিক বৈঠকে চা বাগান নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘এক বছরে একটাও ‘টেক ওভার’ করেছে? মুখেই শুধু ভাষণ। কাজের কাজ কাজ কিছুই করবে না। সব আমাদের করতে হবে।’’
বিজেপির পাশাপাশি এদিন সিপিএমকেও নিশানা করলেন তিনি। দুই দলকে একই মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ বলে মমতার অভিযোগ, তলায় তলায় যোগসাজস করে চলছে দু’দলই।