মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগে তিন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটে বিজেপি জয় পেলেও তাকে বিরাট সাফল্য বলে মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রী মনে করছেন, তাঁদের প্রস্তাব মেনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকদের মধ্যে কংগ্রেস আসন ভাগাভাগির কাজ আগে সেরে ফেললে এখন এই ফল দেখতে হত না। এই সূত্রেই মমতার আরও বক্তব্য, বিজেপি-বিরোধী শক্তির মধ্যে ঠিকমতো বোঝাপড়া হলে লোকসভা ভোটে ফল অন্য রকম হবে।
রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের হাত থেকে সরকার ছিনিয়ে নেওয়ার পরেই নতুন উদ্যমে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব তিন রাজ্যের এই জয়কে ‘মোদী ম্যাজিক’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। বঙ্গ বিজেপির নেতারাও রবিবার থেকে দাবি করতে শুরু করেছেন, লোকসভা ভোটে এ রাজ্য থেকে তাঁরা বিপুল আসন পাবেন এবং তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য মনে করছেন, তিন রাজ্যের এই বিধানসভা নির্বাচনের ফল যতটা না বিজেপির সাফল্য, তার চেয়ে অনেক বেশি কংগ্রেসের ‘ব্যর্থতা’। তাঁর কথায়, ‘‘এটা কংগ্রেসের বোঝা উচিত ছিল। কংগ্রেসকে আমি বারবার বুঝিয়েছিলাম, যাতে অনেক আগেই আসন ভাগাভাগির কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করে নেওয়া যায়। যদি সেটা হত, তা হলে কখনওই এই ফল হত না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই ফলে এত চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।’’
বিজেপি-বিরোধী শক্তির সঙ্গে কংগ্রেস বোঝাপড়ার পথে না যাওয়ায় কী ভাবে মাসুল দিতে হয়েছে, তার উদাহরণ হিসেবে মধ্যপ্রদেশের দৃষ্টান্ত টানছেন তৃণমূল নেত্রী। ওই রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে আসন চেয়েছিল অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু কমল নাথেরা রাজি হননি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, অখিলেশের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ার কারণে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে ৭১টা আসন হারতে হয়েছে। যার ফায়দা পেয়েছে বিজেপি। মমতার মতে, ‘‘এই ফলাফল তো বোঝাপড়ার ফসল নয়। এর পরে বোঝাপড়া হবে এবং তার ফল যা হবে, সেটাও বিজেপি বুঝবে! তাই এতেই চিন্তার বেশি কারণ নেই।’’
তিন রাজ্য বিপর্যয়ের পরে ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠক ডেকেছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তবে সূত্রের খবর, দার্জিলিঙে পারিবারিক ও প্রশাসনিক কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত থাকায় দিল্লির বৈঠকে মমতা নিজে যেতে পারবেন না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন হিসেবে ৬ তারিখ বিভিন্ন দলেরই নানা কর্মসূচি থাকে। তবে খড়্গের ডাকা বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠাবে তৃণমূল।
চার রাজ্যের মধ্যে কংগ্রেস এ বার নিজেদের হাতে থাকা তিন রাজ্য খুইয়ে নতুন জয় পেয়েছে তেলঙ্গানায়। ফল প্রকাশের পরে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কংগ্রেসকেই কটাক্ষ করেছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রথমত, তিন রাজ্যে এটা যত না বিজেপির সাফল্য, তার চেয়ে বেশি কংগ্রেসের ব্যর্থতা। দ্বিতীয়ত, ভিন্ রাজ্যে জিততেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি নকল করেছে অন্য দল। তৃতীয়ত, লোকসভা ভোটে এর প্রভাব পড়বে না। মিলিত ‘ইন্ডিয়া’-র প্রভাব থাকবে। চতুর্থত, দেশে বিজেপিকে হারানোর লড়াইতে নেতৃত্ব দেওয়ার দল তৃণমূলই।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন মুখ খোলেননি। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘পুরনো বাংলা প্রবাদ ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’ মনে পড়ে যাচ্ছে কুণালবাবুর কথা শুনে! বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছে কংগ্রেস। তাতে হার-জিত আছে। কংগ্রেস লড়াই চালিয়ে যাবে। কুণালবাবুরা বরং নিজেদের দলের চৌর্যবৃত্তি বন্ধ করার দিকে নজর দিন!’’