মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
ধর্নামঞ্চ থেকে প্রথম দিনেই সব বিরোধী দলের জোট গড়ার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার ধর্নার শেষ লগ্নে তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমি জোট বাঁধলে সবাইকে এক করে জোট বাঁধব। সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো করতে আমি দেব না।’’
কংগ্রেসের সঙ্গে কিছুটা ‘দূরত্ব’ বজায় রেখে এত দিন আঞ্চলিক দলগুলির জোটের উপরে জোর দিয়ে গিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চ থেকে সার্বিক জোট গড়ার এই আহ্বান তাতে কিছুটা ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই ফের ‘উদ্যোগী’ হতে পারেন, মমতার এ দিনের বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা। যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি কী করবেন বা তাঁর পদক্ষেপ অন্য সব বিরোধী দলকে এক মঞ্চে আনার ক্ষেত্রে কী ভাবে এবং কতটা কার্যকর হবে, সেই বিষয়টি এখনই খুব স্পষ্ট নয়।
এ দিকে তাঁর এই ধর্না চলাকালীন কেন্দ্র থেকে সরকারের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তিনি যে ক্ষুব্ধ তা-ও প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘দু’দিন ধৈর্য দেখালাম। ভাবলাম, আপনারা ভাববেন। কেউ যোগাযোগ করে বলবেন, ভুল হয়েছে। রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেব। কিন্তু একটা চুনোপুঁটি নেতামন্ত্রীও যোগাযোগ করেননি। এঁদের মনে, বাংলার জন্য কোনও আবেগ, ভালবাসা নেই।’’ সেই সূত্রেই তিনি বলেন, ‘‘নেতাজি বলেছিলেন, দিল্লি চলো। আজ আরও এক বার চলো দিল্লি চলো। সেখানে অন্য রাজ্য থেকেও লোক নিয়ে যাব। যদি ঢুকতে না দেয়, যেখানে আটকানো হবে, সেখানেই বসে পড়ব।’’
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এখান থেকে চোর, ডাকাত, গুন্ডারা দিল্লিতে যাচ্ছে আর বলছে, আবাস প্রকল্পে টাকা দিয়ো না। রাস্তার টাকা দিয়ো না। ১০০ দিনের টাকা দিয়ো না। আর টাকা দিচ্ছে না।’’ এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘জেনে রাখুন, রাজ্যের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ করলে আমরাও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবরোধ করে দেখিয়ে দিতে পারি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার ঘোষণা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপি ও সিপিএম। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘দিল্লি যান, সমস্যা নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, ওখানে পুলিশ অমিত শাহের অধীনে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের দাবিতে দিল্লিতে যান। কিন্তু সেই যে কোমরে দড়ি পরাবেন বলেছিলেন, তার কী হল?’’
এ দিনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অপব্যবহারের অভিযোগে তোপ দেগেছেন মমতা। বলেন, ‘‘টাকার খেলা? ইডি দেখাচ্ছেন। বিচারককে ভয় দেখাচ্ছেন।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘২০২৪-এ যখন ক্ষমতায় থাকবেন না তখন এই ইডি আপনাদের পিছনেই যাবে।’’ বিজেপিকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ভোটের আগে সব নেতাকে জেলে ভরে দাও! সবাইকে ভাতে মেরে দাও! অশান্তি লাগিয়ে দাও! যোগ্য জবাব তোমাকে আমরা দেব।’’ কেন্দ্রের শাসক দলের উদ্দেশে মমতা আরও বলেন, ‘‘আমরা ভদ্র, সভ্য। সৌজন্য জানি। কিন্তু আমাদের চমকালে আমরা গর্জাই। গর্জালে আমরা বর্ষাই।’’