কপাল ফেটে জখম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার।
বাড়ির চত্বরে হাঁটার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর কপালে কয়েকটি সেলাই করা হয়। তৃণমূলের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে মমতার কপাল ফেটে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশ্যে আসা সেই ছবিতে মমতাকে আচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা গিয়েছে। যদিও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মমতা সংজ্ঞাহীন নেই। তাঁর জ্ঞান রয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছেন চিকিৎসকেরা। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কালীঘাটের বাড়ির চত্বরে হাঁটছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই সময়েই কোনও ভাবে পড়ে যান তিনি। সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যাওয়ায় কপালে চোট পান। গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। প্রথমে তাঁকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নিজের গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা দেখেই মমতার কপালে সেলাই করতে হবে বলে জানান।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, মমতাকে উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর কপালের ক্ষত বেশ গভীর। তবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা গিয়েছে। এমআরআই, সিটি স্ক্যান করানো হয়। একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর জখম হওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই দলীয় বৈঠক থামিয়ে দেন ঘাটালের বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ দেব। এর পরেই ঘাটালের বিশালাক্ষী মন্দিরে পুজো দিতে যান তিনি। টুইট করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। বাড়িতেই সম্ভবত আচমকা পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর জখম। মাথায় চোট, রক্তপাত। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। যা যা প্রয়োজন, পরীক্ষা প্রক্রিয়া চলছে।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন এই ঘটনা ঘটে, তখন মমতার কালীঘাটের বাড়িতেই ছিলেন অভিষেক। তাঁর গাড়িতেই মমতাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে সভা করেন অভিষেক। সেখান থেকে কলকাতা ফিরেই তিনি সোজা মমতার কালীঘাটের বাড়িতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই গিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক যখন মমতার বাড়িতে ছিলেন, সেই সময়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। অভিষেক ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কপালে গভীর ক্ষত হয়েছে। কী করে এই ঘটনা ঘটল, তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে হাঁটার সময় মমতা পড়ে গিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে একটি সূত্রের দাবি, ঘরের শোকেসের কোণায় আঘাত লেগে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। বাড়ি চত্বরে হাঁটার সময় তিনি কারও সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছেন কি না বা তাঁকে কেউ ধাক্কা দিয়েছেন কি না, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন মমতার ঘনিষ্ঠ মহল।অভিষেকের পাশাপাশি এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছেন অভিষেকের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এ ছা়ড়াও হাসপাতালে যান দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ মালা রায় বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। গিয়েছেন মমতার ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ও।