—ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কের রহস্যমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিজেপি প্রতিনিধি দলের পর বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। ২৫ মিনিটের আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি চিঠি তিনি তুলে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে। সূত্রের খবর, সেই চিঠিতে মমতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিজেপি নেতারা ওই ঘটনা নিয়ে সম্ভবত বিকৃত তথ্য রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মীকে সম্মান করা হয়। বিজেপি যে ভাবে দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুকে রাজনৈতিক ঘটনা হিসাবে সাজানোর চেষ্টা করছে, রাজ্য পুলিশের তদন্ত সে কথা বলছে না। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য পুলিশের মতে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং হয়তো টাকা-পয়সার হাতবদলের সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক থাকতে পারে। মৃত ব্যক্তির পকেটে যে নোট পাওয়া গিয়েছে, তাতে দু’জন ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে বেআইনি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডি অবশ্য এ দিনই ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেছে। যা নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের বক্তব্য, ‘‘দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালাবার চেষ্টা করেও প্রকারান্তরে রাজ্য় সরকার মেনে নিল, ওটা খুন।’’ লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের সচেতক কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায় পাল্টা বলেন, ‘‘পুলিশ কী করেছে, আমি জানি না। কিন্তু তদন্তের বিভিন্ন স্তরে পুলিশ নানা পদক্ষেপ করে। এ ক্ষেত্রে খুনের মামলা করে থাকলে বিজেপির তো অভিযোগের আর জায়গাই থাকল না।’’
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মৃত বিধায়ক ২০১২ সাল থেকে একটি কৃষি উন্নয়ন সমবায় ব্যাঙ্কের সচিব পদে নির্বাচিত ছিলেন, যার অফিস ছিল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থানায়। অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি (এআরসিএস)-র পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, মোট ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ওই ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। যার মধ্যে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার কোনও হিসাব নেই। গোটা বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ খবর করে একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিল করবে এআরসিসি। তৃণমূল নেতৃত্ব এই বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হাজার ছুঁল, সংক্রমণের হার বেড়ে ১৪
তৃণমূল সূত্রের মতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্ত থেকে অনুমান, মৃত বিধায়ক টাকা লেনদেনের চক্রে জড়িত ছিলেন। যে টাকার কোনও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না, তার সঙ্গে অনেকের দুর্নীতি যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গোটা বিষয়টি ত্রাসের সঞ্চার করেছে বিজেপি নেতাদের মধ্যে।
রাষ্ট্রপতির হাতে বুধবার এই চিঠিই তুলে দিয়েছেন ডেরেক ও' ব্রায়েন। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য রাষ্ট্রপতিকে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন? আমাদের লোক খুন হয়েছেন। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করছি, সিবিআই দিয়ে তদন্ত হোক। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) যদি মনে করেন, কোনও গণ্ডগোল নেই, আত্মহত্যাই হয়েছে, তা হলে সিবিআই তদন্ত হলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ওঁর উপরে তো কোনও দোষ আসবে না!’’
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে বিজেপি-র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট নজরে রেখেই হাওয়া গরম করার কাজ শুরু করেছে বিজেপি। এ দিনও বিধায়ক-মত্যুর বিষয়টিকে সামনে এনে ‘হ্যাশট্যাগ মমতা গুন্ডারাজ’ সহযোগে টুইট করেছেন বিজয়বর্গীয়। তাঁর কথায়, “মমতার সরকার পুরোপুরি গুন্ডাদের অধীনে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজনৈতিক হত্যা, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের হত্যা এই ঘটনা পরম্পরারই সাম্প্রতিক উদাহরণমাত্র।“ জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর কথা উল্লেখ করে বিজেপি নেতা বলেছেন, ‘‘২০১৮ সালের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, রাজনৈতিক হত্যার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের এক নম্বর স্থানে রয়েছে। এখনও পরিস্থিতির বদল হয়নি।’’ বিধায়কের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবিতে এ দিন রাজ্য় জুড়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচিও করে বিজেপি।