তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
ঝড় যে আসতে চলেছে, তার ইঙ্গিত ছিল কলকাতার দলীয় সভাতেই। বুধবার পুরাতন মালদহে তৃণমূলের কর্মিসভার মঞ্চে প্রথম মিনিট কুড়ি সেই ঝড়ই দেখলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। প্রাক্তন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র থেকে জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমকের হাত থেকে বাঁচলেন না কেউই। মমতা প্রশ্ন করলেন, ‘‘কবে ঐক্যবদ্ধ হবেন মালদহের নেতারা?’’ মুর্শিদাবাদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত আমাদের হাতে এসেছে। পরের ভোটে সেখানকার প্রতিটা আসন আমরা পাব। তা হলে মালদহে কেন হবে না?’’ সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘‘যত দিন না মালদহ পুনরুদ্ধার হচ্ছে, এই জেলার নেতাদের সঙ্গে আমি বৈঠক করব না।’’
গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জন্য মালদহের নেতাদের উপরে তিনি কতটা ক্ষুব্ধ, সেটা সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভাতেই জানিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘কোনও কোনও জেলা নিজেদের ইচ্ছেমতো পার্টি করছে। যেমন, মালদহ জেলা।
এটা করতে দেব না। দলে থাকতে গেলে নিয়ম মেনে চলতে হবে, না হলে অন্য দলে চলে যেতে হবে। আমি নতুন নেতা তৈরি করে নেব।’’ সে-দিনই তিনি মালদহে আসেন। কিন্তু গত ৪৮ ঘণ্টায় জেলার কোনও নেতার সঙ্গে বৈঠক করেননি।
এ দিন মমতা বলেন, ‘‘জেলায় মাত্র এক ডজন বিধানসভা আসন। কিন্তু আমাদের দশ ডজন নেতা থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁরা একটা আসন বার করতে পারেন না?’’ মৌসম নুর কংগ্রেস থেকে এসেও জিততে পারেননি, এই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ‘‘মৌসম একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অথচ দেখা গেল, যে কাজ করে না, সে জিতল আর যে দৌড়ে কাজ করে, তাকে হারিয়ে দেওয়া হল।’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘কোন অঙ্কে ভোট ভাগাভাগি হল? মালদহে যদি সংখ্যালঘু ভোট বেশি হয়, তা হলে মৌসম তো সংখ্যালঘু, সে জিতল না কেন?’’ এর পরেই তিনি জেলা নেতৃত্বের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘১২টি আসনই উদ্ধার করতে হবে।’’
এ দিন মঞ্চ থেকে জেলার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দেন মমতা। তখন আর এক দফা ধমক দেন নেতানেত্রীদের। প্রাক্তন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রকে নিষেধ করেন মানিকচকের বাইরে পা বাড়াতে। আবার ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহ থেকে বেরিয়ে জেলার কাজ করতে বলেন বাবলা (দুলাল) সরকারকে। জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে বলেন সাবিত্রীর সঙ্গে ঝগড়া না-করতে। পরে মানিকচকের দায়িত্বে সাবিত্রীর সঙ্গে গৌরকে সহযোগী করে দেন। মোথাবাড়ির নজরুল হক, রতুয়ার মহম্মদ ইয়াসিনদের নাম ধরে ধমক দেন। নিজেদের শুধরে নিতে বলেন।
দলের একটি সূত্র বলছে, এই পুরো প্রক্রিয়ায় কিন্তু সব থেকে লাভবান ইংরেজবাজারের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু। কী ভাবে? ওই সূত্রের বক্তব্য, কৃষ্ণেন্দুকে এ দিন ধমকের তালিকায় রাখেননি নেত্রী। উপরন্তু তাঁকে ইংরেজবাজারের ১০টি ওয়ার্ডের সঙ্গে জেলার দু’টি বিধানসভার কেন্দ্রেরও দায়িত্ব দিয়েছেন। কেন? ওই সূত্রের দাবি, সম্প্রতি কৃষ্ণেন্দু কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছিলেন বলে খবর। ডালুবাবুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বাড়ছিল। তাই হয়তো এই পুনর্বাসন।