(বাঁ দিকে) কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আদালতের বাইরে বিচারপতির বিভিন্ন মন্তব্যের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার পরদিনই সেই প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়েই গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। কিন্তু যা বলছেন, তাতে বিচারপতির উদ্দেশে তাঁর ‘পরোক্ষ বার্তা’ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তাঁকে নাম না করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। বলা হয়, হাই কোর্টের এক বিচারপতি আদালতের বাইরে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য কী? মমতা বলেন, ‘‘আমাকে এ সব প্রশ্ন করবেন না! বিচারব্যবস্থা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমি আমার লক্ষণরেখা জানি। আপনারাও সেই রেখা অতিক্রম করবেন না।’’
বিচারব্যবস্থা নিয়ে যে মন্তব্য করা যায় না, তা জানেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং প্রশাসক মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁর ‘গণ্ডি’ মেনে চলছেন। এই পর্যন্ত বলেই মমতা থেমেছেন। কিন্তু যা বলেননি, তার ‘তাৎপর্য’ও কম নয়। প্রশাসনিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, নিজের লক্ষ্মণরেখার কথা বলে আসলে সকলকেই তাঁদের ‘লক্ষ্মণরেখা’ বা ‘সীমা’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও বিশদে কিছু বলেননি। বলেছেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাই তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না। কিন্তু সেই সন্দেশখালিকাণ্ডেই গত শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের শাসকদলের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। সন্দেশখালিতে আক্রান্ত ইডি আধিকারিকদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘ইডি অফিসারদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। দুর্নীতির তদন্ত আটকাতে রাজ্য সরকার কত টাকা সুপ্রিম কোর্টে খরচ করল? পরিমাণটা আমি জানতে চাই।’’ অন্যত্রও বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘এটা কী ধরনের রাজ্য চলছে, কী ধরনের প্রশাসন চলছে, তা আমরা বুঝতে পারছি সকলেই। দেখা যাক কত দিন চলে!’’
বুধবারই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন অভিষেক। তাঁর আর্জিতে বলা হয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হোক। হাই কোর্টে গঠন করা হোক একটি বিশেষ বেঞ্চ। যে বেঞ্চ নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা শুনবে। পাশাপাশি, অভিষেকের দাবি, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের বাইরে বার বার যে এক পক্ষের বয়ান তুলে ধরছেন, তা থেকে তাঁকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হোক। বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ থেকেও মামলা সরানোর আর্জি জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
কিছু দিন আগে অভিষেকের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের সামনেই তিনি প্রশ্ন করেন, এক জন নেতা হিসাবে অভিষেকের সম্পত্তির উৎস কী? সাংসদ কি তাঁর সম্পত্তির হিসাব দেবেন? বাম নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের উদাহরণ টেনে বিচারপতি বলেন, ‘‘অভিষেক যদি সমাজমাধ্যমে সম্পত্তির হিসাব দিয়ে পোস্ট করেন, তবে তাঁর সমসাময়িক নেতা, ধরুন মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বা অন্য নেতাদের কাছেও আমি একই আবেদন রাখব। তাঁরাও সম্পত্তির হলফনামা তৈরি করে সমাজমাধ্যমে দিন। আমরা দেখতে চাই।’’ এ সবের মাঝেই বিচারপতি সংক্রান্ত প্রশ্নে বৃহস্পতিবার মমতার জবাব ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনূক্ত বার্তা’ পৌঁছয় কি না।