মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কারও ‘কুকীর্তি’-র দায় শুধুই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির।
লোভ আসলে ব্যক্তিনির্ভর। কেউ ভাল হবেন না খারাপ, লোভ করবেন বা করবেন না, সেটা তাঁর উপরেই নির্ভর করে। অন্য কারও উপর নয়। বলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক দিবসে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে জল্পনার বিশেষ অবকাশ থাকছে না। কারণ, তাঁর দল তৃণমূল এবং প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট— নাম না-করলেও রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গেই ওই কথা বলেছেন মমতা। বুঝিয়ে দিয়েছেন, কারও ‘কুকীর্তি’-র দায় শুধুই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির।
সোমবার বিশ্ব বাংলা মেলাপ্রাঙ্গণে ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান প্রদান করে রাজ্য সরকার। সেই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কে লোভ করবেন, কতটা লোভ করবেন, সেটা তিনিই স্থির করবেন। অন্য কেউ নন। নাম না করলেও তিনি যে পার্থের দিকেই ইঙ্গিত করছেন, তা একপ্রকার স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি কত টাকার মালিক হলাম, সেটা আমার পরিচয় নয়। পয়সা আজ আছে, কাল উড়ে যাবে। আমি কতটা লোভী হব, কতটা ভাল ভাবে চলব, তা আসলে নির্ভর করে আমার উপর। কতটা খারাপ হব, নির্ভর করে আমার উপর।’’
সেই সূত্রেই মমতা জানিয়ে দেন, এক জনের কারণে সকলের কুৎসা করা ঠিক নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পাঁচটা আঙুল এক নয়। একটা রোগা, একটা মোটা, একটা বেঁটে। সমাজে ভালও আছে, খারাপও আছে। একটা মানুষ কী একটা খারাপ ব্যবহার করল, তার জন্য পুরো সমাজকে কুৎসা করে উড়িয়ে দিলাম, সবাইকে খারাপ বললাম, কুৎসা করলাম, এটা ঠিক নয়।’’
বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুলেছেন, কেন দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের উপর লাগাম পরাননি মমতা? কেন নিয়ন্ত্রণ করেননি দুর্নীতি? শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে সেই অভিযোগের জবাবও দিলেন মমতা। বললেন, ‘‘আপনি যদি আমাকে বলেন, ১০০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? ভগবানও কি ১০০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? আমি কে? আমি এক জন সাধারণ মানুষ!’’ মমতা এ-ও বলেন, ‘‘কাঁঠাল গাছে আমের জন্ম হয় না। কখনও কখনও ভাল মানুষও বিপথে পরিচালিত হয়। অনেক ভাল মানুষও সঙ্গদোষে খারাপ হয়ে যায়। অবসাদে ভুগলে সেটা হতে পারে। তাঁদের জন্য সকলকে কুৎসা করা ঠিক নয়। তাঁদের আমাদের সঠিক পথে আনতে হবে। এক জন শিক্ষক সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাটছেন। অথচ কী একটা খারাপ করলেন, সেই নিয়ে হইহই হয়। তিনি যে বাড়িতে গিয়েও খাতা দেখছেন, তা তো বলি না!’’